Read Time:7 Minute, 33 Second

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে মৈত্রী সম্পর্ক বহুদিনের। গাজায় গত অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলের হামলায় সমর্থন দিয়ে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, দিয়েছেন অস্ত্র–সামরিক সরঞ্জাম। তবে রাফায় ইসরায়েলের হামলা চালানোর পরিকল্পনার পর কিছুটা যেন বেঁকে বসেছেন বাইডেন। দেশি–বিদেশি চাপের মধ্যে ইসরায়েলে অস্ত্রের একটি চালান স্থগিত করেছেন। ফলে দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। খবর বিবিসির

বিশ্বে কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলোর একটি ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রী। চলতি সপ্তাহে এ সম্পর্ক কিছুটা যেন গুটিয়ে নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিষয়টি সামনে এসেছে টেলিভিশনে তাঁর এক আলাপচারিতায়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ইসরায়েল যদি গাজার রাফা এলাকায় স্থল হামলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে? বাইডেনের সাফ জবাব ছিল, ‘আমি আর অস্ত্র দেব না।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কের মূল ভিত্তিই হলো ওয়াশিংটনের অস্ত্র সরবরাহ। আর বাইডেন এই অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের বিষয়টিই সামনে এনেছেন। আসলে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় যে চরম মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা ঠেকাতে প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছেন বাইডেন। তার সাম্প্রতিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গত চার দশকের মধ্যে প্রথমবারে মতো দুই দেশের সম্পর্কে ফাটলের আভাস পাওয়া গেল। গত শতকের আশির দশকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ক্ষমতায় থাকার সময় থেকে এমন কোনো পরিস্থিতি দেখা যায়নি।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক বিশ্লেষক ও মধপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে পড়েছেন বাইডেন। একদিকে রয়েছে ইসরায়েলের এককাট্টা সমর্থক রিপাবলিকান পার্টি, আরেক দিকে গাজায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে বিভক্ত তাঁর ডেমোক্রেটিক পার্টি। তবে এখন পর্যন্ত বাইডেনকে দেখে মনে হয়েছে, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নষ্ট হয়—এমন কিছু করতে চান না তিনি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার একই কথা বলছেন যে রাফায় পুরো মাত্রায় স্থল হামলা চালানো হবে। সেখানে হামাসকে নির্মূলের জন্য এমন অভিযান প্রয়োজন। যুদ্ধবিরতির চুক্তির বিষয়ে আলোচনা সফল হোক বা না হোক, এ অভিযান হবেই। গাজায় সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মুখে এই রাফাতেই উপত্যকাটির ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে চরম মানবেতরভাবে জীবন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

রাফায় পূর্ণ মাত্রায় স্থল হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে বহুবার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এলাকাটিতে ‘হামাস–সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুগুলোতে সুনির্দিষ্ট অভিযান’ চালানোর জন্য চাপও দিচ্ছে। বিশ্লেষক অ্যারন ডেভিড মিলার মনে করেন, বাইডেন এটা ভেবে ভয় পাচ্ছেন যে রাফায় স্থল অভিযান চালানো হলে গাজায় সংঘাত থামানোর বা হামাসের হাতে এখনো জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের মুক্তির বিষয়টি ঝুঁকির মুখে পড়বে। আর এ হামলা হলে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যেও বিভাজন বাড়বে। এসব ভেবেই অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের কথা বলে ইসরায়েলকে একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন বাইডেন।

বাইডেনের নির্দেশে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। তাতে বলা হয়েছে, গাজা সংঘাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েল হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। ওই প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে এই মূল্যায়নের বিষয়ে ‘পূর্ণ তথ্য’ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। এর অর্থ দাঁড়ায়, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে তারা।

অস্ত্রের চালান স্থগিতের সিদ্ধান্তে বাইডেনের নিজের দলের অনেকেই খুশি। যেমন সিনেটর ক্রিস কুনস। তিনি বলেন, রাফায় হামলা থেকে নেতানিয়াহুকে বিরত রাখতে বারবার চেষ্টা করেছেন বাইডেন। এরপরও উত্তেজনা বেড়েছে। কারণ, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের রাজনৈতিক সমর্থনের ওপর নির্ভর করেন নেতানিয়াহু। এই জাতীয়তাবাদীরা চায় না, গাজাবাসীরা মানবিক সহায়তা পাক। তাদের উদ্দেশ্য, পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা। অস্ত্রের চালান স্থগিত করাটা সেই প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গত ৭ অক্টোবব হামাসের হামলার পর ইসরায়েলে ছুটে গিয়েছিলেন বাইডেন। ইসরায়েলের প্রতি অকপট সমর্থন জানিয়েছিলেন। আবার সতর্ক করে এটাও বলেছিলেন, ‘নাইন-ইলেভেনের হামলার পর আমরা যেসব ভুল করেছিলাম, সেই ভুলগুলো যেন আপনারা করবেন না।’ তিনি আসলে এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে ‘ফিলিস্তিনের মানুষজনও একইভাবে বড় দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। সারা বিশ্বের মতোই নিরাপরাধ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুতে আমাদের সমবেদনা রয়েছে।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ইউনেসকোর ‘বিশ্বস্মৃতি’র তালিকায় রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম
Next post বাংলাদেশের রিজার্ভ আরও কমে ১৮ বিলিয়ন ডলার
Close