Read Time:6 Minute, 17 Second

বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতন্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি বলে মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কারিগরি দল। প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দল।

ইইউর ইলেকশন অবজারভেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি সাপোর্টের (ইওডিএস) ওয়েবসাইটে ৩৩ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে মতামতের পাশাপাশি ২১টি সুপারিশও করেছে ২৭ দেশের এই জোট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ছিলো না। একদিকে যেমন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিলো না। অন্যদিকে আন্দোলন করার অবাধ সুযোগও সীমিত করা হয়েছিলো। বিচারিক কার্যক্রম ও গণ-গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। গণ-গ্রেপ্তারের কারণে বিরোধী দল ব্যস্ত ছিলো আদালত পাড়ায়।

ভোটাররা ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত ‌‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ভোটারদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ ছিলো না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ছিলো একটি অত্যন্ত মেরুকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে পরিচালিত। বিএনপি ও দলটির শরিকরা নির্বাচন বয়কট করায় আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব ছিলো। বিরোধীরা সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছিলো, যা প্রত্যাখ্যান করা হয়। নির্বাচনকালীন সময়ে বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ, সমিতি, আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়। বিএনপির প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাবন্দি করায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বিএনপির পক্ষে অসম্ভব ছিলো।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যথেষ্ট সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ছিলো না। কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স চুরির অভিযোগ ছাড়াও পাওয়া গেছে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার খবরও। নির্বাচনের দিন ব্যালট বাক্স ভর্তি এবং জালিয়াতির প্রচেষ্টাসহ নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটির তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলা করা হয়েছিলো। ২৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। তবে অন্যান্য ঘটনার যথেষ্ট তদন্ত করা হয়নি।

প্রতিবেদনে ইইউ কারিগরি মিশন সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচনের জন্য মোট ২১টি পরামর্শ দিয়েছে।

পরামর্শগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো-
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ সহ সংসদীয় সম্পর্কিত সমস্ত আইন, প্রবিধান এবং বিধিগুলোর একটি ব্যাপক পর্যালোচনা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আইনি নিশ্চয়তা বাড়াতে পারে।

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনার বোর্ড নিয়োগের ব্যবস্থা যোগ্যতাভিত্তিক ও স্বাধীন নিয়োগের মাধ্যমে হওয়া উচিত। যা জনস্বার্থে কাজ করার লক্ষ্যে কমিশনের হাত শক্তিশালী করবে। সর্বোত্তম অনুশীলনের সাথে সংগতিপূর্ণ একটি স্বাধীন প্যানেল বিষয়টি তত্ত্বাবধান করতে পারে।

বাকস্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিধান মেনে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০২৩-এর বিধানগুলোর পর্যালোচনা করতে হবে। অস্পষ্ট এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধিনিষেধগুলো সরানো যেতে পারে।

সুশীল সমাজ যাতে নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য বিদেশি অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) আইনের বিধান, ২০১৬ এর সীমাসহ সুশীল সমাজের কার্যক্রম এবং অতিমাত্রায় এর ওপর আমলাতান্ত্রিক নিবন্ধনের বিষয়টি পর্যালোচনা করা যেতে পারে।

ভোট ও গণনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বর্ধিত সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা যেতে পারে। তার জন্য ভোট কেন্দ্রের আশপাশে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমের ওপর সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে স্পিকারের সাক্ষাৎ
Next post মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে সুখবর
Close