Read Time:8 Minute, 31 Second

পুলিশের বাঁধার কারণে ঢাকার সাত স্থানের কোথাও কালো পতাকা মিছিল করতে পারেনি বিএনপি। ‘অবৈধ ডামি নির্বাচন’ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল করার কর্মসূচি ছিল দলটির। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ বাঁধা দিয়েছে। ধরপাকড়, হামলা গ্রেপ্তার হয়েছে; ফলে তারা কর্মসূচি পালন করতে পারেননি।

পরে সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির অভিযোগ করেন, সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল থেকে ৫০ জনের বেশি বিএনপি নেতাকর্মী আটক করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি চারটি স্থানে কালো পতাকা মিছিল করার কথা ছিল। এই চার স্থান হলো- মতিঝিল পীরজঙ্গী মাজার এলাকা, ধানমন্ডির নিউমার্কেট এলাকা, যাত্রাবাড়ীর কদমতলী বাসস্ট্যান্ড ও সূত্রাপুরের দয়াগঞ্জ মোড়। আর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ঘোষণা ছিল তারা শাহজাদপুরে, উত্তরা ১২ নম্বর এবং মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন মসজিদের সামনে মিছিল করবে।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সাত জায়গার কোথাও তারা কালো পতাকা মিছিল করতে পারেননি। কেবল দুটি স্থানে দুই থেকে তিন মিনিটের ঝটিকা মিছিল করতে পেরেছেন। এরমধ্যে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর এলাকায় নেতাকর্মীরা জড়ো হতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, দুপুর ২টায় উত্তরা ১২ নম্বরের কবরস্থানের কাছে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিতে আসেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। গাড়ি থেকে নামার পর বক্তব্য শুরু করতেই পুলিশ তাকে ঘিরে ফেলে এবং কোনো কর্মসূচি করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এসময় মঈন খান বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল একটি কারণে। সেটা হলো, আমরা একটা দেশ চাই, যে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন থাকবে। কিন্তু আজ কিছুই নাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে যাব। রাজপথে থাকব। কয়েক মিনিট পরেই মঈন খানকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তোলে পুলিশ।

গাড়িতে তোলার আগে মঈন খান পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আমি কী অপরাধ করেছি?’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঈন খানকে পুলিশের গাড়িতে তোলার আগে তাকে পেছন থেকে ঠেলে গাড়িতে তোলা হয়। মঈন খানের সঙ্গে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ ১১ জনকে আটক করা হয়।

এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা পশ্চিমের এডিসি সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি সমাবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এটা ছিল অনুমোদনহীন। তারা দরখাস্ত করেছিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে এটা অনুমোদন করা হয়নি। যে কারণে আমরা ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। ৮ থেকে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, মঈন খানকে কেউ আটক করেনি। তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে সূত্রাপুরে আড়াই মিনিটের ঝটিকা মিছিল করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ওই কর্মসূচিতে বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরী ও ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। আজিমপুর এলাকায়ও জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে গেলে পুলিশের বাধায় ওই কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। আর কদমতলী এলাকায় পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের দাঁড়াতে দেয়নি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাইদুর রহমান বলেন, কদমতলীতে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে গেলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। পীরজঙ্গী মাজার এলাকাতে দাঁড়াতে দেয়নি। পীরজঙ্গী এলাকায় কর্মসূচি করতে না পেরে বিজয়নগর এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছেন নেতা–কর্মীরা। সেখান থেকে পাঁচজন আটক করা হয়েছে। এছাড়া আজিমপুর থেকে ১৫ জন ও দয়াগঞ্জ এলাকায় মিছিল শেষে ফেরার পথে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মতিঝিলের পীরজঙ্গী মাজার এলাকায় আয়োজিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের। তিনি বেলা আড়াইটায় সেখানে গিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, এখানে কর্মসূচির জন্য জায়গা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু চারদিকে পুলিশের বাধায় নেতা-কর্মীরা দাঁড়াতে পারেনি। আমি শুনেছি, তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান সংসদকে বৈধ বলতে পারি না। তাদের আত্মতৃপ্তি তারা সরকার গঠন করেছে। কিন্তু আমাদের এক দফার আন্দোলন চলমান থাকবে। আমরা জনগণকে একত্র করতে পেরেছি। শতকরা ৯০ ভাগ লোক আমাদের সঙ্গে আছে। তাদের সম্পৃক্ত করে আগামীতে লক্ষ্য অর্জন করব।

গণঅধিকারের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ:
এদিকে রাজধানীতে গণঅধিকার পরিষদের (নুর) কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এতে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দলটি। বিকেলে পুরানা পল্টনে অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবিতে’এই কালো পতাকা মিছিল বের করে গণঅধিকার পরিষদ। এসময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বেশ কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনিম, জসিম উদ্দিন আকাশ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারজানা কিবরিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নুসরাত কেয়া, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুনসহ আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post পিটার হাসের উপস্থিতিসহ দ্বাদশ সংসদের ১ম দিন যা যা হলো
Next post বাংলাদেশে ডলারের পরিবর্তে নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্য করতে চায় চীন
Close