Read Time:6 Minute, 48 Second

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন তার মেয়ে মনিকা ইউনূস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, শ্রম আইন-২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না। সবশেষ গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেন।

মামলার বিষয়ে মনিকা ইউনূসকে একাধিক প্রশ্ন করেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ম্যাট ফ্রেই। মনিকা বলেন, ‘আমার বাবা তার সারাটা জীবন একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছেন, সেটা হলো দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তার ও সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বলে রাখা ভালো, যে অভিযোগ উঠেছে সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ফৌজদারি মামলা। তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ, আমার বাবা ও তার সহকর্মীরা কোনো অপরাধ করেনি।’

ম্যাট ফ্রেই জিজ্ঞেস করেন, ‘তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন তারা নির্দোষ?’ জবাবে মনিকা ইউনূস বলেন, ‘অবশ্যই।’

ম্যাট বলেন, ‘বাংলাদেশে সম্প্রতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশ শাসন করছেন। আমার মনে হয়, পৃথিবীতেই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নারী তিনি।’ জবাবে মনিকা ইউনূস বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা নোট করা গুরুত্বপূর্ণ যে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচন বয়কট করেছে। সুতরাং, সেখানে গণতন্ত্রের অবস্থাটা কী, সেই প্রশ্নটি সামনে চলে আসে।’

পরবর্তীতে ম্যাট জিজ্ঞাসা করেন, ‘এতদিন ক্ষমতায় থাকা কেউ কি আপনার বাবাকে রাজনৈতিক হুমকি মনে করেন?’ জবাবে মনিকা বলেন, ‘আমি জানি না, তিনি তো রাজনীতির মানুষ নন। তিনি একজন বেসরকারি নাগরিক। যিনি বিশ্বজুড়ে কাজ করছেন এবং অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।’

ম্যাট তখন বলেন, ‘ড. ইউনূস তো রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিলেন।’ প্রতিক্রিয়ায় মনিকা বলেন, ‘একটা সময়ে চেয়েছিলেন। পরে তিনি মত পরিবর্তন করেন।’

ম্যাট প্রশ্ন করেন, ‘কেন তিনি সরে আসেন?’ জবাবে মনিকা বলেন, ‘তিনি ভেবেছিলেন রাজনীতি তার জন্য নয়। তিনি মনে করেন গ্রামীণ নিয়ে, নোবেল পাওয়ার পরও আরও অনেক কাজ করা সম্ভব। যখন তিনি আয়েশে জীবন কাটাতে পারতেন, তখন নতুন কিছু শুরু করলেন। যাকে আমরা এখন সামাজিক ব্যবসা বলছি।’

ম্যাট ফ্রেই প্রশ্ন করেন, ‘কেন তিনি (শেখ হাসিনা) ও বিচারকরা ড. ইউনূসকে জেলে দেখতে চান?’ জবাবে মনিকা ইউনূস বলেন, ‘আমি যদি জানতাম ভালো হতো। কিন্তু আমি সত্যিই জানি না। তাই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। আমি যেটা জানি, তা হচ্ছে আমার বাবা ও তার সহকর্মীরা নির্দোষ।’

ম্যাট ফ্রেই বলেন, ‘হয়তো সরকার মনে করছে ক্ষুদ্রঋণের দ্বারা উপকার পাওয়া ৯০ লাখ মানুষ তার (ইউনূস) অনুগত ভক্ত হতে পারেন। কোনো সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলে তার সমর্থক হতে পারে। সেজন্য সরকার হয়তো হুমকি বোধ করছে।’ এর জবাবে মনিকা বলেন, কিন্তু, তিনি কোনো ধরনের রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন না এবং জড়াতে চাচ্ছে না।

ম্যাট ফ্রেই জিজ্ঞাসা করেন, ‘মামলা নিয়ে ড. ইউনূসকে কী করবে?’ জবাবে মনিকা বলেন, ‘তিনি আপিল করবেন ও আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন। আমি আশা করি এগুলো বন্ধ হবে, তার বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ হবে। তিনি অনেকগুলো কাজ হাতে নিয়েছেন। আশা করি নির্বিঘ্নভাবে তিনি কাজগুলো করে যেতে পারবেন। প্যারিস অলিম্পিক থেকে শুরু করে অনেকগুলো প্রকল্প নিয়ে তিনি কাজ করছেন। বিশ্বজুড়ে বাস্তুহারাদের আবাসন নিয়ে কাজ করছেন। এই কাজগুলো করার জন্য তাকে সক্রিয় থাকতে হবে। জেলে থাকলে হবে না।’

সাক্ষাতকারের শেষে ম্যাট ফ্রেই প্রশ্ন করেন, ‘শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার বার্তা কী?’

মনিকা ইউনূস বলেন, ‘আমি এসব থামাতে বলব। এই হয়রানি যেন বন্ধ হয়। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করতে একসঙ্গে কাজ করার চমৎকার সুযোগ আছে, যেমনটি তারা অতীতে করেছিলেন। উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাংলাদেশ যেমন রোল মডেল হয়ে আছে, তেমনই যেন থাকে।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ইলন মাস্ককে টপকে কে এই শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নল্ট
Next post শঙ্কা আইনজীবীর : জেলে বা রিমান্ডে যেতে হতে পারে ড. ইউনূসকে
Close