জাতীয় পার্টিতে (জাপা) নাটকীয়তা চলছেই। এবার পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। অব্যাহতি দেয়ার পর নিজেকে দলটির চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশিদকে মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে অব্যাহতিকে আমলেই নেয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
গুলশানের নিজ বাসায় ক্ষুব্ধ, বঞ্চিত, বহিষ্কৃত, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন রওশন এরশাদ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু। এসময় রওশন এরশাদের বাড়ির সামনে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য ছিলেন। রওশন এরশাদ লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিগত দিনের জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি। আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টিতে এখন একটি ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বক্তব্য ও বিবৃতি এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাদের ভূমিকা পার্টিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৭টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান করে ২৬টি আসনে সমঝোতা করা এবং আসন সমঝোতার পরেও জনসম্মুখে অস্বীকার করে দেশবাসী এবং পার্টির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পার্টিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। ২৬টি আসন সমঝোতার পর বাকি আসনের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে জনগণের বিরূপ সমলোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তাদের কোনো খোঁজখবর না নেয়ার ফলে ভোটের মাঠে পার্টি চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ায় পার্টির নেতাকর্মীরা তার প্রতিবাদ করার অধিকার রাখেন। এই প্রতিবাদী নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা কিংবা সান্ত¡না প্রদান না করে ক্রমাগত বহিষ্কার ও অব্যাহতির মাধ্যমে পার্টির অস্তিত্ব রক্ষা করা হয়েছে। পার্টির অবস্থা সার্বিকভাবে বিবেচনা করে আমি গত ২২শে জানুয়ারি পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দলে ঐক্য ফিরিয়ে এনে সকল বহিষ্কার ও অব্যাহতির আদেশ বাতিল করে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা তা আমলে নেননি। এই ধারাবাহিকতায় গত ২৫শে জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পল্লীবন্ধুর ৬৬৮ জন নেতাকর্মী পার্টি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় দলে বিরাট সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এসময় তিনি পাঁচটি সিদ্ধান্তের কথা জানান। এগুলো হলো- সংকট নিরসনে পার্টির নেতাকর্মীদের অনুরোধে এবং পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১ ধারায় বর্ণিত ক্ষমতাবলে আমি পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নকে অব্যাহতি প্রদান করলাম। নেতাকর্মীদের অনুরোধে আমি পার্টির চেয়াম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত আমি কাজী মো. মামুনুর রশিদকে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করলাম। তিনি সার্বিকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। পার্টির অন্যান্য পদ-পদবি স্ব স্ব অবস্থায় বহাল থাকবে এবং পার্টির যে সকল নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে এবং যাদের পার্টির কমিটির বাইরে রাখা হয়েছিল তাদের পূর্বেকার স্ব-পদে পুনর্বহাল করা হবে এবং যথাশিগগির পার্টির জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এরশাদপুত্র যুগ্ম মহাসচিব রাহগির আল মাহি (সাদ এরশাদ), সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সারওয়ার মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল হক, খোরশেদ আলম, জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিকুল হক, ছাত্র সমাজের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মৃধা মিরাজুল ইসলাম রাজ প্রমুখ।
সভাশেষে মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়া কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের দল এখন শক্তিশালী করতে হবে। তারা দলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারা এটাকে নিজের সম্পত্তি বলে মনে করছেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে দলের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের দলের দায়িত্ব পালনের জন্য চেয়ারে বসানো হয়েছিল। তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যর্থতার কারণেই তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সিলেটে মাজার, রংপুরে এরশাদের কবর জিয়ারত করবো। এরপর আমরা কাকরাইলে দলীয় পার্টি অফিসে বসবো। আমরা ফেব্রুয়ারিতে কাউন্সিল করতে চাই। তারই প্রস্তুতি নেয়া হবে আমাদের প্রধান কাজ। সেই সঙ্গে দলকে আবার সুসংগঠিত করাও জরুরি।
রওশন এরশাদের ঘোষণার পরই সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। বনানীস্থ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হচ্ছেন জিএম কাদের। দলের নিবন্ধন নম্বর ১২। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তিনিই চেয়ারম্যান এবং আমি মহাসচিব। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে এমন কোনো ধারা নেই, যে ধারার ক্ষমতায় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, মহাসচিব বা অন্য কাউকে পদ থেকে বাদ দিতে পারে। এমন কিছু আমাদের গঠনতন্ত্রেও নেই। তিনি বলেন, এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো তিনি আমাদের বাদ দিয়েছেন। এর আগেও দুইবার আমাদের বাদ দিয়ে তিনি সেই চিঠি প্রত্যাহার করেছেন। তাই পার্টির মহাসচিব হিসেবে বেগম রওশন এরশাদের ঘোষণা নলেজে নিচ্ছি না। এই সিদ্ধান্তের কোনো ভিত্তি নেই, এটি অগঠনতান্ত্রিক। এগুলো একদম অশিক্ষিত মানুষের মতো কথা। এ কথার কোনো ভিত্তি নাই। রাস্তার একজন লোক বললো বহিষ্কার করলাম। এটা নিয়ে আমার বলার কিছু নাই। সামনে এসে বললে ভেবে দেখবো।
তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদ হচ্ছেন জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের স্ত্রী, আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি। সে কারণেই তাকে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক করা হয়েছে। তার দলীয় বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই।
More Stories
উগ্রবাদীদের সাথে সরকারের একটি অংশ মিলে হিন্দুদের উচ্ছেদে চেষ্টা চালাচ্ছে: চিন্ময় কৃষ্ণ দাস
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী অভিযোগ করেছেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে যেখানেই আন্দোলন হয়েছে, সেখানেই...
আ.লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: নুর
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে...
গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গে জড়িতরা...
আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেন জামায়াত আমির
সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আমির...
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...