ঐক্যবদ্ধ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা অনেক সহ্য করছি, দেশের মানুষও অনেক ধৈর্য ধরছে, আর নয়। আগুন সন্ত্রাসীরা যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে।’
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলের আরামবাগে সুধী সমাবেশে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে চড়ে মতিঝিলে যান সরকারপ্রধান। এ সময় তার সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল সার্ভিসের দ্বিতীয় ধাপের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া তো বলেছিলেন, একশ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না- একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। আজ তিনি কোথায় আছেন। আল্লাহর মাইর, দুনিয়ায় বাইর। ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ। আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি, আর জনগণের সমর্থনে আস্থা রাখি। আওয়ামী লীগ চার বার ক্ষমতায়। আবারও মানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা ক্ষমতায় আসব। আর বিএনপি গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। খালেদা জিয়া দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মারে। বাসে আগুন দেয়। আমি দেশের জনগণকে বলবো, তারা যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। যারা আগুন দেয় তাদেরও পুড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তাদের শিক্ষা হবে। আমরা এখনো সহ্য করছি, দেশের মানুষ ধৈর্য ধরে আছে। সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের আর ছাড় দেওয়া হবে না।‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে অনেক উন্নয়ন-অগ্রগতির পরিকল্পনা আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা যখন দেশের উন্নয়ন করছি তখন আমরা কি দেখলাম আগুন সন্ত্রাস করে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারছে বিএনপি। এটিই তাদের কাজ, এটা তারা করবেই। এই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে জাতির পিতার হত্যাকারী মোশতাক পুরস্কৃত করেছিলেন সেনাপ্রধান বানিয়ে। পরে জিয়াউর রহমান নিজেই ক্ষমতা দখল করে। এই জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে হত্যা করেছে। বিএনপির কাজই হচ্ছে এদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ধ্বংস করা। তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়া গ্যাস দিবে বলে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে দেশের সম্পদ বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারি না। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিয়ে ক্ষমতা আসতে পারি না । আমি সেটা দেইনি। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা করেই ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিলেন। একইভাবে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন খালেদা জিয়া। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরে কী হয়েছিল, দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করেছিল।‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পাতাল রেল করা হবে। পাতাল রেল করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এমআরটি লাইন ফাইভ, পাতাল রেলের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকাবাসীর জন্য উপহার আমি দিয়ে গেলাম। এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। উত্তরায় থেকে মাত্র ৪০ মিনিটে মতিঝিল আসা যাওয়া করতে পারবেন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত গড়ে ২৫ হাজার প্রতিদিন যাত্রী চলাচল করছেন। মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত এ মেট্রোরেল বর্ধিত করেছি। সেটার কাজও চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য ১২ হাজার প্রকৌশলীর চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনের একটি কালো অধ্যায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধু আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনি ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জয় বাংলা স্লোগান বন্ধ করেছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। আমরা দুই বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলাম। ৬ বছর জিয়াউর রহমান আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। যারা আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ২৮ তারিখে কী করেছিল আপনারা দেখেছেন। তাদের রাজনীতি মানেই ধ্বংসের রাজনীতি। ২৮ অক্টোবর পুলিশ যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। কিন্তু তারা পুলিশকে রাস্তার মধ্যে পিটিয়ে হত্যা করলো। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ ও মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। এটাই কি রাজনীতি? বিএনপি রাজশাহীতে মাটিতে ফেলে পুলিশ হত্যা করেছিল, সেটা স্মরণ রাখা দরকার। দেশের মানুষকে বলবো, যারা আগুন দিতে আসবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে।‘
শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের মানুষের জন্য কিছুই করেনি। দেশের মানুষ ছিল অন্ধকারে। আমরাই ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন করছি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট চান শেখ হাসিনা।
More Stories
উগ্রবাদীদের সাথে সরকারের একটি অংশ মিলে হিন্দুদের উচ্ছেদে চেষ্টা চালাচ্ছে: চিন্ময় কৃষ্ণ দাস
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী অভিযোগ করেছেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে যেখানেই আন্দোলন হয়েছে, সেখানেই...
আ.লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: নুর
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে...
গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গে জড়িতরা...
আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেন জামায়াত আমির
সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আমির...
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...