Read Time:6 Minute, 30 Second

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলায় অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না আরব দেশগুলো। এর জেরে অঞ্চলটির মিত্রদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য ও অবস্থানের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের মত, ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থন ছাড়াও গাজায় বেসামরিক মানুষ গণহত্যার বিষয়ে দ্বিমুখী নীতি এবং কৌশলগত অদূরদর্শিতা প্রকাশ করেছে দেশটি।

হামাসের হামলার জবাবে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় ওয়াশিংটনের সমর্থনের কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো মিত্র জর্ডান। মিসরসহ অন্যরাও কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা জশ পল বলেন, ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে দ্ব্যর্থহীন এবং প্রশ্নাতীত সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। অথচ এই অঞ্চলের অনেকেই গাজার হামলাকে চরম অবিচার হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি তিনি মার্কিন এই নীতির কারণে প্রকাশ্যে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেকে সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু এতদিন আমরা যে সামান্য বিশ্বাসযোগ্যতা রেখেছিলাম, তাও এখন রাখতে পারছি না।’

সম্প্রতি হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বক্তব্যে ইসরায়েলকে আরও বেশি সামরিক সহায়তা দিতে কংগ্রেসের কাছে প্রস্তাব দেন বাইডেন। তিনি বলেন, হামাস ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে গাজায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে আস্থা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্য।

গত শনিবার কায়রোর শীর্ষ সম্মেলনে আবেগঘন বক্তব্য দেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের জীবন ইসরায়েলিদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ! আমাদের জীবন অন্যান্য জীবনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ! আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ ইসরায়েলে বাধ্যতামূলক নয়। মানবাধিকারেরও সীমানা আছে– তারা সীমান্তে সীমান্তে, জাতিতে জাতিতে এবং ধর্মে ধর্মে পৃথক।’ পশ্চিমা নেতাদের কাছে একটি বার্তা হিসেবে ইংরেজিতে দেওয়া তাঁর এই বক্তব্য অঞ্চলটির অনেকের অনুভূতিই প্রকাশ করেছে।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মিডল ইস্ট কাউন্সিলের ফেলো ওমর রহমান বলেছেন, পশ্চিমা দ্বৈত নীতি এবং ভণ্ডামি আগের চেয়ে এখন বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলের বেলায় সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র দ্বৈত নীতি দেখিয়েছে।

কায়রো শান্তি সম্মেলনের আগেও বাইডেন এবং মিসরীয় আর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতাদের সঙ্গে গাজা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বৈঠক বাতিল করে জর্ডান। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘে সংবাদ সম্মেলনে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরিও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পশ্চিমা দ্বৈত নীতির নিন্দা করেন। এদিকে, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, বিশ্বকে অবশ্যই সামরিক অভিযান বন্ধ করতে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।

মিডল ইস্ট কাউন্সিলের ফেলো ওমর রহমান বলেন, আরব সরকারগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তবে সেটি করতে হলে ফিলিস্তিনের গণহত্যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত, এই বিবেচনা তাদের এড়িয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিজ নিজ জনগণের দিকেও নজর রয়েছে আরব নেতাদের। যারা ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ।

শুক্রবার মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির প্রশাসন গাজার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কায়রোর আইকনিক তাহরির স্কোয়ারে বড় সমাবেশের আয়োজন করে।

ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা এবং মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের পরিচালক জেমস রায়ান বলেছেন, বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হ্রাস পাচ্ছে এবং তার মিত্ররা আরও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। চীনের মতো অন্যান্য ক্রমবর্ধমান শক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও সবচেয়ে শক্তিশালী, তবে দেশটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ২৮ অক্টোবর : রাজনীতিতে উত্তাপ, জনমনে আতঙ্ক, সতর্ক পুলিশ
Next post অনুমতি না পেলেও শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবে জামায়াত
Close