Read Time:7 Minute, 43 Second

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন নরওযয়ের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার ইয়ন ফসে। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি।

ফসের লেখা নাটক ও গদ্যের প্রশংসা করে সুইডিশ একাডেমি বলেছে, যেসব কথা অনুচ্চারিত থেকে যায়, সেগুলো লেখনীতে তুলে এনেছেন তিনি। তার লেখা বিশ্বজুড়ে নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

পুরস্কার ঘোষণার পর ইয়ন ফসে বলেন, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়াটা দারুণ সম্মানের এবং কিছুটা ভীতিকরও বটে। আমি অভিভূত এবং কিছুটা নার্ভাসও। সাহিত্যের জন্য এই পুরস্কার অনেক মর্যাদার। এটি শুধু সাহিত্যেরই পুরস্কার।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান নাট্যকারদের একজন ইয়ন ফসে। তার জন্ম ১৯৫৯ সালে। ৪০টির মতো নাটক লিখেছেন তিনি। নরওয়েতে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতাকে শৈল্পিক সুষমায় লেখনীতে তুলে ধরেছেন ইয়ন ফসে। সাহিত্যকর্মে মানুষের উদ্বেগ ও দোদুল্যমানতার বিষয়গুলোকে উপস্থাপনের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন।

নোবেল কমিটি বলেছে, কোনো একক লেখার জন্য নয়, বিপুল সাহিত্যকর্মের জন্য ইয়ন ফসেকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তাঁর সাহিত্যকর্মের কোনো ছোট তালিকা করা যায় না এবং তা করার চেষ্টাও অত্যন্ত কঠিন।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেস ওলসন তাকে বর্ণনা করেছেন অনেক দিক দিয়ে দারুণ এক লেখক হিসেবে। তিনি বলেছেন, ‘তাঁর বিশেষত্ব হচ্ছে, লেখায় মানবঘনিষ্ঠতা। তা আপনার গভীরতর অনুভূতিগুলোকে স্পর্শ করে যাবে—উদ্বেগ, নিরাপত্তাহীনতা, জীবনের অর্থ ও মৃত্যু এ রকম নানা বিষয় প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেককে যেগুলোর মুখোমুখি হতে হয়।’

ওলসন লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, তিনি এ দিক দিয়ে বহুদূরে পৌঁছেছেন। তিনি যা যা লিখেছেন সেগুলোর প্রতিটিরই সর্বজনীন প্রভাব রয়েছে। সেটা নাটক, কবিতা বা গদ্য তা কোনো বিষয় নয়, মানবপ্রকৃতির মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি এর সমান আবেদন রয়েছে।’

যারা ইয়ন ফসের লেখার সঙ্গে পরিচিত নন এবং জানেন না কোন বইয়ের মধ্য দিয়ে তার লেখা পড়া শুরু করা উচিত, তাদের উদ্দেশে ওলসন বলেছেন, তার সব কটি নাটকই অত্যন্ত সুখপাঠ্য।

ইয়ন ফসের গদ্যের মধ্যে ২০০০ সালে প্রকাশিত উপন্যাসিকা ‘মর্নি অ্যান্ড ইভিনিং’ একটি চমৎকার গ্রন্থ এবং ‘সেপটোলজি’ নামে তাঁর সাতটি পরস্পরযুক্ত উপন্যাসও দারুণ বলে উল্লেখ করেছেন নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান।

সুইডিশ একাডেমির বর্ণনায়, বর্তমানে বিশ্বে যাদের নাটক সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হয়, তাদের মধ্যে একজন ইয়ন ফসে। গদ্যের জন্যও তার খ্যাতি ক্রমে বাড়ছে। অনেকগুলো উপন্যাস ছাড়াও প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুতোষ বই ও অনুবাদের বই রয়েছে তার।

ফসের সেরা কাজ বলে বিবেচিত তিনটি বই হিসেবে প্রকাশিত তার ‘সেপ্টোলজি’। একাডেমির একজন প্রতিনিধি বলেন ২০২১ সালে এটি রচনা শেষ করেন লেখক। যেখানে সাত দিন ধরে একজন বয়স্ক শিল্পী নিজেকে অন্য ব্যক্তি হিসাবে কল্পনা করেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেন। ৮০০ পৃষ্ঠার বইটিতে তাদের একাকী জীবনযাপনের গল্প যেখানে ধর্ম, পরিচয়, শিল্প এবং পারিবারিক জীবনের বাস্তবতা ফুটে উঠেছে।

ফসের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘স্টেংড গিটার’ (১৯৮৫)-এ প্রথমবার তার নিজস্ব শৈলী ‘ফস মিনিমালিজম’ থিম দেখা গেছে। এই গল্পে দেখা যায় একজন অল্প বয়সী মা তার বাসার ময়লা ফেলার জন্য নিজের ফ্ল্যাটে তালা মেরে বাইরে যায়। কিন্তু ভেতরে তখন তার সন্তান বদ্ধ অবস্থায় ছিল।

কিন্তু পরিস্থিতি তখন এমন যে সে তখন সন্তানকে একা রেখে কোথাও সাহায্য চাইতেও যেতে পারছে না। এই ধরনের কিছু সংকটপূর্ণ মুহুর্ত ফসে তার লেখনিতে নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা আমাদের জীবনে নিয়মিতই ঘটে।

তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে তাঁর উপন্যাস রয়েছে ‘বোটহাউস’ (১৯৮৯) এবং ‘মেলঙ্কোলি’ ১ ও ২ (১৯৯৫-১৯৯৬)।

পুরস্কারের ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (১০ লাখ ডলার) পাবেন নরওয়েজিয়ান এই লেখক। গত বছর ফরাসি লেখক আনি এরনো এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।

নরওয়েতে দুটি সরকারি ভাষা প্রচলিত। এর মধ্যে একটিতে তিনি লেখেন যেটি সংখ্যালঘু। নোবেল জয়ের পর ফসে বলেন, পুরষ্কারটিকে আমি এই ভাষার স্বীকৃতি এবং প্রচারের আন্দোলন হিসেবেই দেখি।

ভাষাটি ‘নিউ নরওয়েজিয়ান’ নামে পরিচিত এবং মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। ফসের ভাষার সংস্করণটি ১৯শতকে গ্রামীণ উপভাষাগুলোর পাশাপাশি বিকশিত হয়েছিল যা এটিকে ড্যানিশ ভাষার প্রভাবশালী ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে তৈরি করেছে। ডেনমার্কের শাসনের অধীনে প্রায় ৪০০ বছর ছিল নরওয়ে।

গত সোমবার থেকে এই বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে চিকিৎসা ও পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম।

বুধবার (৪ অক্টোবর) ঘোষণা করা হয় রসায়নে নোবেলজয়ীদের নাম। রসায়নে নোবেল বিজয়ী তিনজন হলেন, মুঙ্গি জি. বাভেন্দি, লুই ই. ব্রুস ও অ্যালেক্সেই আই. আকিমভ। ফান্ডামেন্টাল ন্যানো টেকনোলজির উদ্ভাবনের জন্য তাদেরকে নোবেল দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি।

নতুন নোবেল লরিয়েট পাবেন নগদ এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার, যা বাংলাদেশি দশ কোটি টাকার সমান।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু: পুতিন
Next post আমেরিকার সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে ক্যাপিটল হিল ছাড়ার নির্দেশ
Close