Read Time:10 Minute, 19 Second

কোনো শর্ত মেনে আমি কোথাও যাবো না’ বলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের এমন এক বার্তার কথা জানালেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আমাদের অনুপ্রেরণার বাতি ঘর। তিনি ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন, আপোষ করেননি। তারপরও এখনো এই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন। আজকে তিনি মৃত্যুশয্যায়। লড়াই করছেন মৃত্যুর সঙ্গে। সেখানেও তিনি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নের কোনো আপোষ নেই। কোনো শর্তে মেনে নিয়ে আমি কোথাও যাবো না।

বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক পেশাজীবী কনভেনশনে বিএনপি মহাসচিব এই বার্তা দেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এই পেশাজীবী কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মাদ আলী ও সঞ্চালনা করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী।

আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের সংবাদ সম্মেলনের দেয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, আইন মন্ত্রী বলেছেন, আমি নাকি ভুল বলেছি, মিথ্যাচার করেছি। এখানে আইনজীবীরা আছেন, ৪০১ ধারায় পরিষ্কার করে বলা আছে, সরকার সরকার সরকার। সরকারের ক্ষমতা আছে শাস্তি মওকুফ করে মাফ করে দেয়ার, ক্ষমতা আছে সাময়িকভাবে স্থগিত করার, দণ্ডকে মাফ করে দিয়ে তাকে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া। অথচ বেমালুম বলে যাচ্ছে কোনো সুযোগ নাই তাকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এই ধরনের কথা-বার্তা বলার মানে হচ্ছে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তারা হত্যা করতে চায়।

নাগরিক সভায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে যেসব বক্তব্য রেখেছেন তাতে ‘জনগণ নিকৃষ্টতম ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছে এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অশ্লীল কথার মধ্যে কিছু সত্য বেরিয়ে এসেছে। স্পষ্ট হয়ে গেছে তার কথায়ই সব চলে, তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর আগেও খালেদা জিয়াকে তিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে উচ্ছেদের কথা বলেছিলেন, সেটাও বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি বলেন, কী ভীষণরকম অহংকার প্রধানমন্ত্রীর। ভাবটা এমন পুরো দেশটা যেনো তার। যদি তিনি নিজেকে অদ্বিতীয় ভেবে থাকেন, তবে ঘোষণা করে দিক, আমিই সব, আমিই সম্রাজ্ঞী।

‘ভয় না ভয় নাই তলে তলে আপোষ হয়ে গেছে’ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ সরকার এতো বেশি ভীত যে, ভয়ের কথা বলছেন, তাদের প্রতি প্রশ্ন রাখতে চাই- তাহলে কি স্বীকার করলেন, আপনারা ভয়ে ছিলেন? তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব আরো বললেন, দিল্লি আছে, আমরাও আছি- তাহলে প্রশ্ন হলো- কি বলেছে দিল্লি? তারা কি বলেছে আপনাদের সব অপকর্মের সঙ্গে তারা আছে? তারা বলেছে যে এভাবেই করতে থাকো, নির্বাচনের দরকার নেই। পরিষ্কার করে বলুন।

বিএনপির মহাসচির বলেন, আমরা ভয়াবহ ফ্যাাসিস্টের পাল্লায় পড়েছি, রং হেডেট প্রধানমন্ত্রী দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষমতায় যেতে ১৪ ও ১৮ সালের মতো এক তরফা নির্বাচনের বাগান সাজিয়ে রেখেছে। তবে এবার আর লাভ হবেনা দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহল কেউই তাকে চায় না। সরকারের প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, গত ১০ মাস ধরে আমরা রাজপথে আন্দোলন করছি। ২২ জনের প্রাণ গেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি বলে এই নয় আঘাত করলে প্রতিরোধ করবো না। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছি ক্ষমতায় যাওয়া বা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য করছি না, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। এ সময় সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান তিনি।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এই পেশাজীবী কনভেনশন হয়। এতে সারা দেশ থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার দেড় সহ্রাধিক প্রতিনিধি এই কনভেনশনে অংশ নেন বলে আয়োজকরা নেন। বিএনপির ¯’স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদও বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, একটি বিষয়ে জের দিয়ে বলতে হয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ। কৃষক শ্রমিকরা দেশের সত্যিকারের প্রাণশক্তি। তবুও যারা পেশাজীবিদের সংখ্যা অনেক কম। তবে পেশাজীবীরা সংখ্যায় অল্প হলেও সমাজের নীতি -নির্ধারণ পেশাজীবিদেরই করতে হবে। পেশাজীবিদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে, এই জাতিকে আপনাদের প্রতিপালন করতে হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা মানবতাকে ধ্বংস করে দিয়েছে তা না হলে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে নিয়ে এভাবে কেউ বলতে পারে? দেশের গতিপথ চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে, তা পরোক্ষভাবে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রধান আ স ম রব বলেন, পেশাজীবিদের বাদ দিয়ে দেশ চলবে না, তাই সংকট দূর করতে তাদেরও আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে হবে। পেশাজীবি শক্তিকে বাইরে রেখে ফ্যাসিবাদিদের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। তিনি বলেন, কদিন আগেও খালেদা জিয়াকে দেখে অর্ধমৃত মনে হয়েছে, মানবতার উপরে কোনো আইন নেই, খালেদা জিয়াকে আগে বাঁচাতে হবে। সরকারের দায়িত্ব হলো- ডা. কি বলছে তা যাচাই করে খালেদা জিয়াকে শীঘ্রই দেশের বাইরে পাঠানো ব্যবস্থা করা হোক। তার কিছু হলে সরকার পালানোর পথ পাবেনা।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, সংসার চালানের সামর্থ্য সরকারে হাতে নেই। এই ফ্যাসিবাদী সরকার কোথা পালাবে সেই পথ খুঁজে পাচ্ছে না। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। দেশকে রক্ষার জন্য হঠাৎ যখন মধ্যরাতে সরকার পতনের আওয়াজ উঠবে, সবাইকে সাহস করে বেরিয়ে আসতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একটা মানুষ কতোটুকু মাথা খারাপ হলে খালেদা জিয়াকে নিয়ে বলতে পারেন- প্রতিদিন তো মারা যাবেন শুনি কই মরে তো যান না। প্রধানমন্ত্রী আজ খালেদা জিয়ার মৃত্যু কামনা করেন, ১ বছর তো তাকেও মরতে হতে পারে। তবে খালেদা জিয়া সুস্থ্য থাকবেন এবং অনেক বছর ধরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবেন। ওবায়দুল কাদেরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তলে তলে আপোষ মানে কি? স্যাংশন কি উঠে গেছে? তিনি বলেন, এই মাথা খারাপ লোক যা মনে আসে তাই বলে। এগুলো করেই দেশটাকে রসাতলে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা সবাই চাই টই সরকার ভালোভাবে বিদায় নিক, না হলে আঙুল বাঁকা করে হলেও ঘি তুলবোই।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Next post ভারতের সঙ্গে ভিসামুক্ত সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Close