‘বাজেট স্বল্পতার কারণে’ বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের জন্য তাদের পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ তথ্য বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করেছে বলে তারা জানিয়েছে। এ খবরের পর আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো থেকে পর্যবেক্ষক আসবে কিনা তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে ইইউ’র প্রাকনির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের রিপোর্টের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তবে অক্টোবরেই মার্কিন আগাম পর্যবেক্ষক দল দেশে আসবে বলে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ব্রায়ান শিলার জানান, প্রতিনিধিদলটি ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে। প্রতিনিধি দলে ৬ জন সদস্য এবং তাদের সহায়তার জন্য কিছু কর্মকর্তা থাকবেন।
মূলত এ দলটির রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে কিনা।
অন্যদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াৎ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা নিজেরাইতো দেখতে পাচ্ছি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নাই। তাহলে এখানে ইইউ পর্যবেক্ষক দল এসে কী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে?’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আগে বাংলাদেশে আসা প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত জুলাই মাসে ছয় সদস্যের একটি প্রাক-নির্বাচন অনুসন্ধান দল বাংলাদেশ সফর করে। তারা নির্বাচন কমিশন ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে। তারা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলেন। তারা অনুসন্ধান করে ইইউর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের কাছে প্রতিবেদন ও সুপারিশ দেন। তার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে বুধবার চিঠি দিয়ে নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান জোসেপ বোরেল।
তবে ইইউ বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকার জন্য বিকল্প বিবেচনায় রাখছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় ছোট আকারের একটি বিশেষজ্ঞ টিম পাঠাতে পারে তারা। পূর্ণাঙ্গ টিমে দুইশরও বেশি সদস্য থাকে। তারা সাধারণত নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পরে পর্যবেক্ষণ করেন।
এদিকে ইইউ পর্যবেক্ষক দল না আসার খবরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তে এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই-এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন জনগণ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং বিদেশি কেউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে কিনা, তার কোন গুরুত্ব তাদের কাছে নেই। তবে একজন বিশ্লেষক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন ইইউ’র সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী অন্যদেরও নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করতে পারে।
এর আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশ বিষয়ে যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলো সেখানেও মানবাধিকারের পাশাপাশি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রসঙ্গ এসেছিলো এবং তখন অবাধ বাজার সুবিধা (ইবিএ) বাংলাদেশের জন্য অব্যাহত রাখা যৌক্তিক কী-না সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছিলো।
তখনই অনেকে আশঙ্কা করছিলেন যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবের ধারাবাহিকতায় নির্বাচন নিয়ে ‘শক্ত’ কিছু পদক্ষেপ ইইউ’র তরফ থেকে আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বিবিসি বাংলাকে বলছেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আসাটা যেমন অন্যদের উৎসাহিত করতো তেমনি না আসাটাও অন্যদের নিরুৎসাহিত করবে। এখনো সুযোগ থাকলে সংশ্লিষ্টদের উচিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের আপত্তির জায়গাগুলো সম্পর্কে জেনে সেগুলো নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া।
কী বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন:
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল বক্তব্য হলো তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ দল পাঠাবে না, তবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব প্রচেষ্টাকে তারা সহায়তা করবে।
নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ইইউ এ সম্পর্কিত একটি ই-মেইল ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে সেটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান ইইউ তাদের ই-মেইলে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বাজেট স্বল্পতার কথা উল্লেখ করেছে।
যদিও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে বাজেট স্বল্পতার প্রসঙ্গ ছাড়াও ইইউ আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করার বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি বলেও ই-মেইলে উল্লেখ করেছে।
তবে এ চিঠিতে ইইউ বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়াটা নিশ্চিত করতে তারা সব প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করবে।
অর্থাৎ নির্বাচন কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের মধ্যে। আবার সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি না পেলে বিরোধী দল বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিলো। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ওই নির্বাচনে ‘নজিরবিহীন ভোট কারচুপি’র অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে এতে তার সন্দেহ নেই। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা বা না আসাটা একেবারেই নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বিদেশিরা নির্বাচন দেখতে এলো কিনা তার ওপর কিছুই নির্ভর করে না। ইইউ বাজেট স্বল্পতার কারণে আসতে পারবে না বলে বাংলাদেশের নির্বাচন খারাপ হয়ে গেলো?
তার মতে নির্বাচন ঠিক মতোই হবে এবং এ নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কোন প্রভাব পড়বে না।
More Stories
পেন্টাগন থেকে ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনার নথি ফাঁস
ইসরায়েলে ১ অক্টোবর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনার নথির সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও...
হামাসপ্রধান সিনওয়ার নিহতের গুঞ্জন, খতিয়ে দেখছে ইসরায়েল
হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় নিহত হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে...
বাংলাদেশিসহ সব শান্তিরক্ষীকে সরিয়ে নিতে বললেন নেতানিয়াহু
লেবাননে শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্বরত সব সেনাকে সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রোববার...
ইয়েমেনে সম্মিলিত বিমান হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
ইয়েমেনের হোদেইদাহ বিমানবন্দর, সানা এবং ধামার সিটিকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ইয়েমেনের হুথি সমর্থিত টেলিভিশন চ্যালেন...
মুসলিমদের শত্রু এক: খামেনি
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, আমরা যদি এক হতে পারি...
ইসরাইলকে আরও কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল যদি ‘সর্বনিম্ন ভুল’ করে তাহলে তেহরান নিশ্চিতভাবে আরও ‘শক্তিশালী এবং কঠোর প্রতিক্রিয়া’...