Read Time:8 Minute, 31 Second

সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ দুই মানবাধিকার কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মোট ৭২টি মানবাধিকার সংস্থা। এছাড়া আদিলুর ও নাসিরউদ্দিনের রায়ে অসন্তোষ ও উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ দুই মানবাধিকার কর্মীর মুক্তির দাবিতে এবার বিবৃতি দিয়েছে ‘এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (ফোরাম-এশিয়া) এবং এর সদস্য সংস্থাগুলো। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ওই বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক ২৭টি মানবাধিকার সংস্থা স্বাক্ষর করেছে।

বিবৃতিতে আদিলুর ও এলানের প্রতি অটুট সংহতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, তারা (আদিলুর ও এলান) বাংলাদেশে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক ওয়াচডগ অধিকারের সদস্য। তারা যেভাবে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং নারী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে নথিভুক্ত করেছেন তা অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।

২০১৩ সাল থেকে অধিকার এবং এর কর্মীদের বিশেষ করে আদিলুর এবং এলান অব্যাহত বিচারিক হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন। একটি বিক্ষোভ দমনের সময় ৬১ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আনার পরই তাদের ওপর হয়রানি শুরু হয়। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া, অশ্লীল ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করার অভিযোগ আনা হয়। অধিকার দৃঢ়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে যাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে অধিকার, আদিলুর এবং এলানকে টার্গেট করে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এমন অবস্থায়, ‘ফোরাম-এশিয়া’ আদিলুর এবং এলানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। তারা বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষায় তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এক দশকের অযৌক্তিক হয়রানির পর তাদের সাজা প্রদানের ঘটনা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সকল মানবাধিকার কর্মীদের কাছে একটি শীতল বার্তা পাঠায়।

ফোরাম-এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক মেরি আইলিন ডিজ-বাকালসো বলেন, ফোরাম-এশিয়া আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে থাকা সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এই দুই মানবাধিকারকর্মীকে আটকে রাখা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সুনামকে আরও কলঙ্কিত করবে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য তার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, বাংলাদেশ সরকার পূর্ববর্তী পর্যালোচনাগুলির সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি। মানবাধিকারকর্মীদের সুরক্ষা এবং ভয়ভীতি বা হয়রানি ছাড়াই কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিতের যে সুপারিশ করা হয়েছিল তা নিয়ে বাংলাদেশ পুরোপুরি অমনোযোগী ছিল।

এমন অবস্থায় ফোরাম এশিয়া এবং এর সদস্য সংস্থাগুলি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আদিলুর ও এলানকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে থাকা সকল অভিযোগ বাতিল করার আহ্বান জানায়। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি, মানবাধিকারকর্মীদের অধিকারকে যেন সম্মান করা হয় এবং তারা যাতে নিপীড়ন ও প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করাকে অপরাধীকরণ করা থেকে বিরত থাকার পরিবর্তে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার- যেমন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারগুলি সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো হচ্ছে, কম্বোডিয়ান হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশন, আওয়াজ ফাউন্ডেশন পাকিস্তান: সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস, বালাওদ মিন্দানাউ- ফিলিপাইন, বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ– ভারত, বীর দুইনো- কিরগিজস্তান, বাইটস ফর অল, সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সিভিল সোসাইটি এবং হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক, ডিফেন্স অফ হিউম্যান রাইটস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যান রাইটস মেজারমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ পাবলিক ফাউন্ডেশন, ইনফর্মাল সেক্টর সার্ভিস সেন্টার, কারাপাটান অ্যালায়েন্স ফিলিপাইন, কাজাখস্তান ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড রুল অফ ল, কম্বোডিয়ান লীগ ফর দ্য প্রমোশন অ্যান্ড ডিফেন্স অফ হিউম্যান রাইটস, মালদ্বীপস ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক, ন্যাশনাল সেন্টার অ্যাগেইনস্ট ভায়োলেন্স, ফিলিপাইন অ্যালায়েন্স অফ হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেটস, পিপলস ওয়াচ, ফিলরাইটস, পিপলস সলিডারিটি ফর পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি, পাবলিক অ্যাসোসিয়েশন ‘ডিগনিটি’, পুসাত কোমাস, টাস্ক ফোর্স ডিটেনিস অফ ফিলিপাইন্স, থিংক সেন্টার এবং ওমেনস রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post জনগণ আর শেয়ালের কাছে মুরগি দেবে না: মির্জা ফখরুল
Next post খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
Close