Read Time:11 Minute, 52 Second

বিভিন্ন সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পশ্চিমারা এই অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করছে। যা হীতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অংশীদার। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দরকষাকষি অব্যহত রাখতে হবে। বাইরের শক্তির চাপ বাড়াতে হবে, এটা বিশ্বাস করে রাশিয়ার। মিয়ানমারের সাথে রাশিয়া অব্যহত যোগাযোগ রেখে চলছে।

তিনি বলেন, দুই দেশের পরস্পরকে পাশে দরকার। বাংলাদেশ আমাদের ৫০ বছরের বন্ধু। কোভিড পরবর্তী সময়ে আপনারা বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। বিভিন্ন সংকটকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমারা বাংলাদেশের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করছে, যা হিতে বিপরীত হতে পারে।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে, দুই দেশের বাণিজ্য ২ বিলিয়ন থেকে ৩ বিলিয়নে পৌছেছে। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার বিষয়ে আমরা আন্তরিক। একটি ইউনিটকে দ্রুত উৎপাদনে আনতে, অক্টোবরে নিউক্লিয়ার ফুয়েল বাংলাদেশে পৌছাবে। কোন কিছুই লুকাবার নয়। সব কিছু উন্মুক্ত রাখতে পছন্দ করে রাশিয়া। এলএনজি রপ্তানিতে আমরা প্রস্তত আছি। গম ও সার এর সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন করতে, বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেবার কথা আলোচিত হয়েছে। এটা প্রতিশ্রুতি রাশিয়ার পক্ষ থেকে দিয়ে যাচ্ছি।

ল্যাভরভ আরো বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ আরো কিভাবে বাড়ানো যায়, এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে, বৈঠকে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাইরের খেলোয়াড়ের অনাকাঙ্ক্ষিত নাক গলানো, অযৌক্তিক। বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অব্যহত চাপ অগ্রহনযোগ্য। এটা কোন দেশ করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা করণে, সৃষ্ট সংকট কমাতে, জাতীয় একটি মূদ্রায় বিনিময়ে র একটা পদ্ধতি বেড় করার চেষ্টা চলছে। সাপ্লাই চেইন বিঘ্নত। যুক্তরাষ্ট্র ইন্দ্রো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির নামে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। কোয়াড এর মাধ্যমেও একই ধরনের চেষ্টা করেছে, দেশটি। আসিয়ান ফরম্যাট এ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে চলছে, দেশটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রাশিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র যথাসময়ে শেষ হবে। নিউক্লিয়ার ফুয়েল আমদানির বিষয়ে কথা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াই একমাত্র সমাধান মনে করে, রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের সংকট তুলে ধরা হয়েছে। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বাজায় রাখার পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলি। আমরা সবার সাথে আলাপ আলোচনায় বিশ্বাস করি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, এটা সত্যিই আমার এবং বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, মান্যবর সের্গেই ল্যাভরভ বাংলাদেশে সরকারি সফরে এসেছেন, যা রাশিয়ান ফেডারেশনের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর । ঢাকায় তাকে এবং তার প্রতিনিধিদলকে আতিথ্য দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।

বৈঠত প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাগত বিষয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি জাতিসংঘের প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য বহুপক্ষীয় ফোরামে আমাদের অবস্থানসহ দুই দেশের চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে সামগ্রিক আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের যৌথ প্রকল্প – রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইউক্রেন পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, আমরা রাশিয়ান ফেডারেশনকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করি, যেই বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়। আমরা কখনই আমাদের জনগণের প্রতি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কথা ভুলব না, যে সমর্থন আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক মস্কো সফর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি স্থাপন করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ২০১৩ সালে জানুয়ারিতে মহামান্য ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ায় সরকারী সফরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান । এর ফলো-আপ হিসাবে, আমি ২০১৯ সালের এপ্রিলে রাশিয়া সফর করি এবং মানব্যর লাভরভের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও সুসংহত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের সরকার যখন বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি টেকসই এবং সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, আমরা আশা করি, পুরোনো বন্ধু রাশিয়াসহ, যাদের সাথে বহুমাত্রিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের উন্নয়নের অভিযাত্রা, সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আমাদের পাশে থাকবে।

একে মোমেন আরও বলেন, আমরা উভয়েই সম্মত হয়েছি যে, আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির জন্য আমাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে হবে। আমি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি যে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ কোনো জাতির জন্যই মঙ্গল বয়ে আনেনি। পারস্পরিক সংলাপ সংকট ও বিরোধ সমাধানের সর্বোত্তম উপায়। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে যা বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি, খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির সৃষ্টি করেছে। আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আমাদের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছি, যা আমাদের সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানী সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক সহ এটি বাস্তবায়নের সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

মোমেন আরও বলেন, বৈঠকে, আমি সের্গেই লাভরভকে বলেছি যে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বহুপাক্ষিকতায় বিশ্বাস করে, এবং সক্রিয়ভাবে শান্তির সংস্কৃতির বিকাশের পাশাপাশি বিশ্বের প্রধান বিষয়গুলোতে একটি ভারসাম্যমূলক ও টেকসই পদ্ধতিকে সমর্থন করে। আমরা বহুপক্ষীয় ফোরামে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশা করি । আমি ৮১তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (২০২৬-২০২৭) সভাপতি এবং ২০৩১–৩২ মেয়াদে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী আসনের সদস্যপদ সহ জাতিসংঘে আমাদের প্রার্থীতার সমর্থনে রাশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমি ইউক্রেনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি । আমি উপলব্ধি করেছি যে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি-সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয় – জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে আমরা আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ ও মতপার্থক্যের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।

মোমেন বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও নিরাপত্তার সঙ্গে স্বেচ্ছায় তাদের আদি নিবাসে ফিরে যাওয়ার মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত ও অর্থবহ উদ্যোগ খুবই জরুরি। বাংলাদেশ তার সামর্থ্য অনুযায়ী যথাসাধ্য করেছে। এখন আমরা জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং রাশিয়া সহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের অর্থবহ সম্পৃক্ততার অপেক্ষায় রয়েছি, যাতে করে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন এবং তাদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার নিশ্চিত করা যায়। আমি আশা করি রাশিয়া আমাদের এই সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করবে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিসরে তদন্ত শুরু
Next post বাইডেনকে পাহারা দিতে দিল্লি আসছে ‘দ্য বিস্ট’
Close