Read Time:8 Minute, 27 Second

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য আগামী মাসে ভারত সফরে যাবেন। এ সময় শেখ হাসিনাকে দুটি স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে ভারত।

সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। বস্তুত বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জি-২০ ইভেন্টে যোগ দেয়ার জন্য আগামী মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় ভারত তাকে দুটি স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে। যার প্রথম বার্তাটি হচ্ছে- বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- আওয়ামী লীগকে তার সকল চীনপন্থি ও ইসলামপন্থি নেতাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের বেছে নিতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার প্রতি এই জোড়া বার্তা প্রসঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা এস্টাব্লিশমেন্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ঘটনা বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের বিষয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্যের ইঙ্গিত দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের (ভারত ও মার্কিন) নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। ভারত এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে এসব বৈঠক হয়েছে।

ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ‘অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় ধরনের মত পার্থক্য ছিল (বিশেষ করে ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন নিয়ে)। তবে এবার এই দুই দেশের মধ্যে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিস্তৃত ঐক্যমত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জি-টোয়েন্টি ইভেন্টের জন্য দিল্লিতে আসলে তাকে এই দু’টি বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া বলছে, যদিও বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে শেখ হাসিনা দাবি করে আসছেন, তারপরও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের শেষ দু’টি জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানদণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ পোষণ করেছিল।

এর বিপরীতে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে সামনে আসা অভিযোগ সম্পর্কে কখনোই কোনও প্রশ্ন তোলেনি নয়াদিল্লি। ২০১৮ সালের বিতর্কিত সেই নির্বাচনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন জোট ৯৬ শতাংশের বেশি আসন পেয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই প্রথম শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

সংবাদমাধ্যমটির দাবি, বাংলাদেশের নির্বাচন কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে তা নিয়ে ভারত ততক্ষণ চিন্তা করবে না যতক্ষণ ফলাফল হাসিনার পক্ষে থাকে। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের প্রতিবেশীদের মধ্যে সবসময়ই সবচেয়ে ‘বিশ্বস্ত মিত্র’ হিসাবে বিবেচনা করে থাকে নয়াদিল্লি।

আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের অনেক ইচ্ছা পূরণ করেছে- ইসলামি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দমন থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য চলাচলের অনুমতি দেওয়া পর্যন্ত। নয়াদিল্লির জন্য প্রাথমিক উদ্বেগের কারণ হলো, চীনের সঙ্গে হাসিনা সরকারের আপাত নৈকট্য। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ফ্যাক্টরটি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একই অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় ও মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে আলোচনায় যা প্রাধান্য পেয়েছে তা হলো-
১. বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোতে চীনপন্থি ও ইসলামপন্থিদের ব্যাপক উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উভয়পক্ষই। দিল্লি সফরে হাসিনাকে এ উদ্বেগের কথা জানাবে ভারত।

২. উভয়পক্ষই একমত হয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়িত করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনার সফরে ভারত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

৩. ভারত ও আমেরিকা একমত হয়েছে যে, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের অন্যতম প্রধান দাবি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামোতে কোনো স্থান নেই।

৪. শেখ হাসিনা সরকারকে দুর্নীতি ও ব্যাংক খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমস্যাটি মোকাবিলা করতে হবে; যা সাধারণ বাংলাদেশিদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে।

৫. ভারতীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসবে, যা এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে এবং ভারতের নিরাপত্তা হুমকি দ্রুত বাড়বে।

৬. নয়াদিল্লির প্রতিনিধিরা মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে তাদের ভারতের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

আর এই কারণেই বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এই ফ্যাক্টরটি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে একই অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

এর আগে আনন্দবাজার ‘হাসিনাকে দুর্বল করলে ক্ষতি সবার, বার্তা আমেরিকাকে’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এই প্রতিক্রিয়া মিইয়ে যাওয়ার আগেই দ্য টেলিগ্রাফ অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে খবর দিয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ঋণের ৫০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরত পেল বাংলাদেশ
Next post খালেদা জিয়া আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী
Close