Read Time:7 Minute, 11 Second

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়বস্তুতে বড় পরিবর্তন এনে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন একটি আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনে সাজা যেমন কমানো হয়েছে, তেমনি অনেকগুলো অজামিনযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। মানহানি মামলার জন্য কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মানহানির অভিযোগে মামলা হলে গ্রেপ্তার করা হয় না।

আজ সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন এই আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পর সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে প্রস্তাবিত আইনে কী কী আছে তা জানান আইনমন্ত্রী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না বলে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা-২৯ এর পরিবর্তন
এই ধারায় মানহানির বিষয়টি রয়েছে। এতে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রস্তাবিত আইনে এই অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিলেও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, জরিমানা না দিলে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। কিন্তু অপরাধের মূল শাস্তি হলো জরিমানা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা-২১ এর পরিবর্তন
এই ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণার জন্য দণ্ডের বিধান রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এই সাজা কমিয়ে এখন করা হয়েছে ৭ বছর। এ ছাড়া অনেকগুলো ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধের জন্য সাজা দ্বিগুণ বা সাজা বাড়ানো ছিল। প্রস্তাবিত আইনে প্রত্যেকটি ধারায় যেখানে দ্বিতীয়বার অপরাধের ক্ষেত্রে বাড়তি সাজার কথা আছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা ধারা-২৮ এর পরিবর্তন
এই ধারা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে এই ব্যক্তির অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। আর এই অপরাধ দ্বিতীয় বার করলে সাজা আরও বেশি হবে।

প্রস্তাবিত আইনে এটি (২৮ ধারা) পরিবর্তন করে জামিনযোগ্য করা হয়েছে (আগে অজামিনযোগ্য ছিল) এবং সাজা কমানো হয়েছে। এখন এই অপরাধে সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছর।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ধারা-৩১ এর পরিবর্তন
এই ধারায়ও পরিবর্তন করা হচ্ছে প্রস্তাবিত আইনে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটার উপক্রম হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রস্তাবিত আইনে সাজা কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের বাড়তি সাজা বাতিল করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা-৩২ এর পরিবর্তন
এই ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের জন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল।

এটি কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে। হ্যাকিংয়ের জন্য অনধিক ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে একটি ধারায়।

এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন প্রস্তাবিত আইনে গণমাধ্যমের জন্য আলাদা কোনো বিধান রাখা হয়নি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদম্যান মামলাগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইনে চলবে বলে জানান মন্ত্রী।

কবে নাগাদ নতুন আইনটি হবে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আগেও বলেছি, এখনো বলছি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসবে, সেই অধিবেশনে বিলটি সংসদে পেশ করা হবে।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ‘স্যাংশন যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে করা যেতে পারে, শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়’
Next post সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন দমনমূলক না হয়: অ্যামনেস্টি
Close