Read Time:8 Minute, 22 Second

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকের এ পদযাত্রা শুধু পদযাত্রা নয়, এটি বিজয়যাত্রা। এই দেশের মানুষ শেখ হাসিনা সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই এখনি পদত্যাগ করতে হবে।’

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গাবতলীতে বিএনপির সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের পদযাত্রা কর্মসূচির পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা-১৭ আসনে ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের সব রাজনৈতিক দল বলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। গত ১২ জুলাই এ লক্ষ্যে এক দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। আর আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে, শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, এই অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল সোমবার ঢাকায় একটি উপনির্বাচনের নামে তামাশা হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের হ্যাভি ওয়েট একজন প্রার্থী, আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাংকের প্রধান, তাকে দেশের মানুষ চেনে তিনি একজন ড. প্রফেসর আরাফাত। তার প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন হিরো আলম। সেখানে ভোটকেন্দ্রে কোন ভোটার নাই। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিতেই পারেনি, ভোট কেন্দ্র খালি ছিল। সরকারের অথর্ব নির্বাচন কমিশনও বলেছে ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা তো দেখলাম টেলিভিশনে কোথাও ভোটার নেই। ৫ ঘন্টা পর একজন ভোটার আসেন। ওকে নিয়ে লাফালাফি কাড়াকাড়ি।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘ভোটের পড়ে আরাফাত আবার ভি চিহ্ন দেখায়। লজ্জা লজ্জা।’

এ সময় স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘হিরো আলম কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তার সঙ্গে ভোট করতে গিয়ে তাকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে পিটিয়ে পিটিয়ে সাপের মতো মারা হয়েছে। আবার পুলিশ বলে, আমরা তো আমাদের কাজ করেছি। ঠিকই করেছেন একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি তাকে যখন মারে তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলে ১১ শতাংশ ভোটের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এই সমস্ত তামাশা করে আর কোনো লাভ নাই। এই ধরনের তামাশা করে জনগণের সাথে প্রতারণা করে কোনো লাভ হবে না। ২০১৪ সালে ১৫৪ আসনে বিনা ভোটে জোর করে ক্ষমতায় বসেছো। ২০১৮ সালের আগের রাতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আবারও জোর করে ক্ষমতায় বসেছো। এই ধরনের ভোট হতে দেওয়া হবে না। গত ১৫ বছরে সরকার বাংলাদেশের মানুষের পকেট খালি করে দিয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘এই ভয়াবহ দানব, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণকারী, ভোটের অধিকার হরণকারী, ভাতের অধিকার হরণকারী, এই ভয়াবহ বেআইনি অবৈধ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আজকে সারাদেশে পদযাত্রার কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এটা শুধুমাত্র পদযাত্রা নয়; এটি জয়যাত্রা যাত্রা। আমাদের অধিকার আদায়ের যে বিজয়, সেই লক্ষ্যে এই যাত্রা।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশের মানুষ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই এখনি পদত্যাগ করতে হবে।’

আজকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক দফা দাবি আদায় করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ১০/১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের পকেট খালি করে দিয়েছে। ট্যাক্স দিতে দিতে, চার্জ দিতে দিতে, বিদুতের বিল দিতে দিতে মানুষের এখন বেহাল অবস্থা। চাল ডাল তেল লবনরে দাম বাড়ছেই। এটি অসৎ ব্যবসায়ীদের সরকার। জনগণের টাকা লুট করে তা বিদেশে পাচার করছে। যারা এই টাকায় সিঙ্গাপুর, কানাড়ায় বাড়ি বানায় তাদের জন্য এই সরকার। লজ্জা হয়, দুঃখ হয়, ঘৃণা জানাই এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে- যে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে।’

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডেঙ্গুর কথা নাই বা বললাম। ডেঙ্গু হচ্ছে এখানে, আর আমাদের দক্ষিণের মেয়র অবকাশ যাপন করতে চলে গেছেন ইউরোপে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গেছেন আমেরিকায়। বাহ বাহ। কি রকম দায়বদ্ধতা। আর কোনো দিন নয়। এখন আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকারকে পরাজিত করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করি। এটা হচ্ছে বিজয়ের যাত্রা। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায় করবো। এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোদ, বৃষ্টি, ঝড় সব কিছুকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ ভাবে আমরা বিজয় অর্জন করতে চাই। আমি সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবীসহ সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি এই দেশকে রক্ষা করতে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে একজোট হতে হবে। সরকারকে বলছি- পদত্যাগ করেন। না হলে ফয়সালা হবে কোথায়? ফয়সালা হবে ‘রাজপথে’।’

উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা পদযাত্রা কর্মসূচি গাবতলী থেকে শুরু হয়। এই পদযাত্রা টেকনিক্যাল মোড় হয়ে মিরপুর-১, মিরপুর-১০ গোল চত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা (আগারগাঁও), বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার, এফডিসি সড়ক হয়ে মগবাজার এসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হবে। এরপর মালিবাগ, কাকরাইল, নয়াপল্টন (দলীয় কার্যালয়), ফকিরাপুল, মতিঝিল (শাপলা চত্বর), ইত্তেফাক মোড় হয়ে দয়াগঞ্জ রায়সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post প্রেসিডেন্টশিয়াল লাইফ টাইম সম্মাননা পেলেন ফোবানার চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান
Next post হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের উদ্বেগ
Close