Read Time:7 Minute, 26 Second

বাংলাদেশের দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতি-নির্ধারকদের তুমুল দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। প্রায়ই এসব দেশের কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

প্রতিবেশী ভারত সফর শেষে বাংলাদেশে পৌঁছে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পক্ষের সাথে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ সফরে আসার আগে মঙ্গলবার দিল্লিতে ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসকে বিশেষ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রতিনিধি দলের প্রধান উজরা জেয়া।

বুধবার হিন্দুস্তান টাইমসের অনলাইন সংস্করণে সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ও এই অঞ্চলের দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তিনি।

হিন্দুস্তান টাইমসের পররাষ্ট্রবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল এইচ লস্কর যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার কাছে বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে জানতে চান। এসময় তিনি বলেন, দিল্লি সফরের পরপরই ঢাকায় যেতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আজ বিকালের পরে চলে যাব এবং আমরা বাংলাদেশের সরকারের সাথে বিভিন্ন বিষয়, যেমন মানবিক সহযোগিতা, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে জোরদার আলোচনার অপেক্ষায় আছি।

উজরা বলেন, আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। যা আমাদের কয়েক দশকের দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারত্বেরও বিষয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারত্ব বজায় রাখতে শ্রম অধিকার এবং শ্রমিকদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার অধিকারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে। কারণ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদান সীমিত করার বিষয়ে একটি ঘোষণা দিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের পররাষ্ট্রবিষয়ক সম্পাদক এই বিষয়ে জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, আমি আপনাকে সরকারি সেই ঘোষণার কথা বলব; যেখানে আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নতুন ভিসা নীতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। একেবারে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করার উদ্দেশ্যে এই ভিসা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য জরুরি।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতির কথা ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির আওতায় যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তি যদি দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়; তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে।

ওইদিন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার-সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরাও এই ভিসা নীতির আওতায় পড়বেন।

যেসব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বানচালের আওতায় পড়বে সেগুলোও মার্কিন বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য সহিংসতাকে কাজে লাগানো এবং এমন কোনও পদক্ষেপ; যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা সংবাদমাধ্যমকে তাদের মত প্রচার থেকে বিরত রাখা।

বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট-এর ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) ধারা বলে এই নতুন নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।

নতুন এই নীতির কথা ঘোষণা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছিলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবার দায়িত্ব এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যারা কাজ করছেন তাদের সবার প্রতি সমর্থন জানাতেই তিনি এই নীতি ঘোষণা করেছেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post আজান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে নামাজ পড়ছেন রিজওয়ান, ভিডিও ভাইরাল
Next post ওয়াগনার ইউক্রেনে এখন আর গুরুত্বপূর্ণ নয়: যুক্তরাষ্ট্র
Close