মার্কিন নীতিতে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসবাদকে বিবেচনায় নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি ১৭ বাংলাদেশ-আমেরিকান নাগরিক আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্প্রতি এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তারা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলকে জোরালোভাবে সমর্থন করে বলেন, বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমরা আপনার প্রশাসনের উদ্বেগের প্রশংসা করলেও মার্কিন নীতিতে অবশ্যই বাংলাদেশে ব্যাপক সন্ত্রাসবাদের ঘটনা বিবেচনা করতে হবে, যা সরাসরি বিএনপি-জামায়াত জোট এবং জোটের পৃষ্ঠপোষকতায় অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠন দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।
‘মুসলিম দেশ ও অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক মাত্রা বিবেচনা না করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বারবার ব্যর্থতার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া এবং লিবিয়া আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতার উজ্জ্বল উদাহরণ। আমরা বাংলাদেশে তা চাই না। অনুগ্রহ করে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার অনুমতি দিন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং ভাল অংশগ্রহণমূলক চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানই উদার গণতান্ত্রিক ফলাফলের নিশ্চয়তা দেয় না। বিশেষ করে, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের দুটি অবাধ নির্বাচনের মধ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী ঘটনাগুলি ইঙ্গিত করে যে, ২০০৪ সালে একটি অবাধ (এবং তথাকথিত সুষ্ঠু) নির্বাচন প্রকৃতপক্ষে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাকে পরিবর্তন করবে না, যদি না স্টেকহোল্ডারদের নিরাপত্তা, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পাওয়া এবং সংখ্যালঘু এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা না দেওয়া যায়।
‘২০০১ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ইসলামী জোট জয়লাভ করে। বিজয়ের পরপরই ওই জোট বাংলাদেশের ১১টি পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাজুড়ে হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিরুদ্ধে নৃশংস আক্রমণ চালায়। আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার কারণে হিন্দু ও বিরোধী কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছিল। সহিংসতার ফলে ব্যাপক লুটপাট এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, হিন্দু নারীদের ধর্ষণ এবং হিন্দুদের উচ্ছেদ করা হয়। এটি ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে চলতে থাকে।’
বিবৃতিতে তারা আরও জানান, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল নীতি অনুসরণ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়েছে। আমরা পারস্পরিক অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক প্রত্যাশা করি। কিন্তু সম্প্রতি আমরা আপনার প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ এবং কিছু আইন প্রণেতাদের বক্তব্য বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্যের মতো লক্ষ্য করছি এবং এই পদক্ষেপগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য সহিংসতামুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বর্তমান কর্মপন্থা পরিবর্তন করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন নির্বাচিত বাংলাদেশি-আমেরিকান কর্মকর্তা কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন নবী, এনজে মেয়র মাহাবুবুল আলম তৈয়ূব, রাজ্য প্রতিনিধি আবুল খান, কাউন্সিলম্যান আবু আহমেদ মুসা এবং কাউন্সিলম্যান নুরুল হাসান, সম্প্রীতি ফোরামের অধ্যাপক এবিএম নাসির, ইউএসএ বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রকৌশলী রানা হাসান মাহমুদ, বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটেরান্স ১৯৭১ ও ইউএসএ ইনকর্পোরেটেড গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, ক্যালিফোর্নিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের নজরুল আলম, যুক্তরাষ্ট্র ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ফাহিম রেজা নূর, মিশিগান বঙ্গবন্ধু পরিষদের আহাদ আহমেদ, ইউএসএ কমিটি ফর ডেমোক্রেটিক অ্যান্ড সেক্যুলার বাংলাদেশের জাকারিয়া চৌধুরী, জর্জিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের খুরশীদ আনোয়ার বাবলু, গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি বঙ্গবন্ধু পরিষদের দস্তগীর জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ড. আব্দুল বাতেন, ম্যাসাচুসেটস বঙ্গবন্ধু পরিষদের সফেদা বসু, গণতান্ত্রিক নেতা মোরশেদ আলম, পেনসিলভানিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের আবু তাহের বীর প্রতীক, একাডেমিক গ্রুপের প্রফেসর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর মিজান আর মিয়া, প্রফেসর জামিল তালুকদার, প্রফেসর শাহাদাত হোসেন এবং দক্ষিণ নিউ জার্সি বঙ্গবন্ধু পরিষদের নূরন্নবী চৌধুরী। সূত্র : বাসস
More Stories
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প–মামদানি বৈঠকে প্রশংসা আর সৌহার্দ্যের বার্তা
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। দুই...
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এইচ-১বি ভিসা’ পুরোপুরি বাতিলের উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের
যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি দক্ষ কর্মী আনার সবচেয়ে বড় ভিসা কর্মসূচি এইচ-১বি পুরোপুরি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভিসা ফি শতগুণ বাড়ানোর...
আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিবিসিকে চিঠি পাঠালেন ট্রাম্প
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার (১০ নভেম্বর) বিবিসির...
৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করা হয়েছে। মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো...
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: মামদানির হাতে ব্যালট-খামে বাংলায় লেখা
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রায় ৫০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার আজ মঙ্গলবার নগরের পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের লক্ষ্যে...
অন্য দেশের ‘সরকার বদলের’ মার্কিন নীতি শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড
কোনো দেশের সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি মেনে আসছিল, তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা...
