Read Time:6 Minute, 49 Second

বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী র‍্যাব ও এর কয়েক জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানকে সমর্থন করে চীন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষায় চীন সব সময় সমর্থন দেবে।

বুধবার বেইজিংয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এ কথা জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের সাংবাদিক মুখপাত্র ওয়েনবিনকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, সম্প্রতি বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিট বাহিনী র‍্যাবের ওপর দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তার কাছে এই নিষেধাজ্ঞাকে বিভ্রান্তিকর এবং খেলার মতো মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে কোনো দেশের সরকার বদলের ক্ষমতা তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ এসব নিষেধাজ্ঞায় ভয় পায় না এবং তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের কেনাকাটা না করতে। এ বিষয়ে চীনের মন্তব্য কী?’

জবাবে মুখপাত্র ওয়েনবিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের ব্যাপারে আমরা অবগত। আসলে একটি নির্দিষ্ট দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) নিজের জাতিগত বৈষম্য, বন্দুক সহিংসতা ও মাদক বিস্তারের মতো সমস্যাগুলোর দিকে না তাকিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অজুহাত দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে নাক গলাচ্ছে এবং আরো অনেক উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইস্যুতে শক্তভাবে বাংলাদেশি জনগণের অবস্থান ব্যক্ত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের একটি বড় অংশের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মনের কথা ব্যক্ত করেছেন।’

ওয়েনবিন বলেন, চীন ও বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে দুই বন্ধু প্রতিবেশী। বাংলাদেশের সর্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষায় চীন দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানায়। জাতীয় বাস্তবতা অনুযায়ী উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতি সমুন্নত রাখার জন্য বাংলাদেশকে সব সময় সহায়তা করবে চীন। সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করার জন্য আমরা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইনের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার জন্যও আমরা কাজ করতে প্রস্তুত আছি।

প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‍্যাব ও এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পান না এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলেও বিবেচিত হন। একই সঙ্গে তাদের বিদেশে সম্পদ থাকলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত হয়। আর র‍্যাবও প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছ থেকে যেসব সহযোগিতা পেয়ে থাকে, সেগুলোও বাতিল হয়ে যায়।

বাংলাদেশ বরাবরই এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কেন তারা এই নিষেধাজ্ঞা দিল, এটা আমার কাছেও বিরাট এক প্রশ্ন।’ তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এদিকে র‍্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রেখেই গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা-নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার পথে বাধা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা-নীতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়নের জন্ম দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দিন আগে বলেছেন, ‘কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন দেবে—ওসব নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নাই। বিশ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেই মহাদেশের সঙ্গে, মহাসাগরেই আমরা যাতায়াত করব আর বন্ধুত্ব করব।’

Happy
Happy
100 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সামাজিক ন্যায়বিচারই স্থায়ী শান্তি উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করতে পারে: প্রধানমন্ত্রী 
Next post চট্টগ্রামে ফখরুল: ভিসা নীতির কারণে হাঁটু কাঁপছে আ.লীগের
Close