Read Time:7 Minute, 23 Second

ব্যর্থ গণ-আন্দোলন নিয়ে বিএনপি এখন পথহারা পথিক—এ মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, যারা আন্দোলনে জেতে, তারাই নির্বাচনে জেতে। বিএনপি নানামুখী কর্মসূচি দিয়ে গণ-আন্দোলন রচনা করার চেষ্টা করলেও হালে পানি পায়নি। তাদের কোনো কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা ছিল না।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রংপুর বিভাগ ও এর অন্তর্গত সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সদস্যপদ নবায়নের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বিভিন্ন রকমের দফা, ঐক্য জোট করেছে, অনেকভাবে গণ-আন্দোলন রচনা করতে চেষ্টা করেছে। শুরুতেই তা হোঁচট খায়। বহুমাত্রিক কর্মসূচি করেছে কিন্তু জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। দলটি ভবিষ্যতে কী করবে, এখন সেসব হিসাব কষছে।

বিএনপি বহু জায়গায় নালিশ করেছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো জায়গা থেকেই দলটি আশাব্যঞ্জক সাড়া পায়নি। বিএনপি কর্মসূচির পর কর্মসূচি দিয়েছে, কিন্তু জনগণ আসেনি। এখন তাদের নেতা-কর্মীরাই হতাশ। আন্দোলনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। কোন গণতন্ত্র? জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ/না ভোটের গণতন্ত্র নাকি কারফিউ গণতন্ত্র? গণতন্ত্র কি ম্যাজিকের তাস, যে কথায়–কথায় রং বদলায়। সাহেব হয়ে যায় বিবি, বিবি হয়ে যায় সাহেব। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার এই গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই। ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো, মাগুরা উপনির্বাচনের মতো নির্বাচনে আমরা বিশ্বাস করি না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, চট্টগ্রামের আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা নাকি দ্বারে দ্বারে নালিশ করছেন। বিএনপি তাদের কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নালিশ করার দরকার নেই। শেখ হাসিনা গেছেন জাপানের দাওয়াতে। নিজের জন্য কিছু পেতে যাননি। বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশের মানুষের যে কষ্ট, তা কমাতে গেছেন। বিএনপির মতো দেশ বিক্রি করে কোনো সাহায্য নিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। নিজেদের সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে সাহায্য নিচ্ছেন।

অন্য দেশের সুপারিশ, পরামর্শে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে নির্বাচন করার জন্য সংবিধান আছে। এটি পথরেখা নির্দেশ করে। আমরা কারও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ করি না। আমাদের নির্বাচন নিয়ে কেন কেউ হস্তক্ষেপ করবে? দেশ একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র রাতারাতি আসবে না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমেরিকার ২০০ বছরের ঐতিহ্য, কিন্তু এখন পর্যন্ত জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেয়নি। গত জানুয়ারিতে যা হলো, গণতন্ত্রকে রক্তাক্ত করে ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়েছে। কয়েকজন মারা গেছেন। সেই গণতন্ত্র আমাদের শিখিয়ে লাভ নেই। আমাদের সংবিধান যা বলে, তা–ই করব।’

বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি ‘ডেড ইস্যু’ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরির সুযোগ নেই। আদালত এটিকে হিমাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন যারা নিয়ে আসে, সরকারের পদত্যাগ দাবি করে, তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়।

বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা ভয় দেখাবে, সন্ত্রাস করবে, আগুন নিয়ে আসবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। আরও সতর্ক থাকতে হবে। তারা বলে, নির্বাচন করবে না, করতেও দেবে না। মামাবাড়ির আবদার? সংবিধান মেনে যথাসময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন হতে দেবে না, এটা বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা থাকতে এই দেশে হবে না।’

এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একটাই অনুরোধ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ঐক্য। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের শত্রু যেন আওয়ামী লীগ না হয়। আপন ঘরের শত্রু থাকলে বাইরের শত্রু লাগে না। এটি মুখে বললে হবে না, চেতনায় ধারণ করতে হবে। এই বিষয়ে সবাই সতর্ক থাকবেন।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ; বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি; রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম; আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান; কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া; সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী এবং রংপুর বিভাগের অন্তর্গত নয়টি সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া
Next post সুদান থেকে বাংলাদেশিরা ৩ মে জেদ্দা পৌঁছাবে
Close