Read Time:6 Minute, 29 Second

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে টানা ৭ম বারের মত যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের যৌথ অংশীদারিত্বে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডেনমার্ক, গুয়াতেমালা, হাঙ্গেরি, ভারত, মরক্কো ও পূর্ব তিমুর। আজ বুধবার ঢাকায় প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের সভাপতি সাবা কোরেশি। বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষায় গোটা অনুষ্ঠানটি অনুবাদের সুব্যবস্থা রাখা হয়। নিউইয়র্ক ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রী চিন্ময় কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম সংগীত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানটির আলোচনা পর্বে সকল সহযোগী দেশগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধিগণ, জাতিসংঘের জেনারেল এ্যাসেম্বলি ও কনফারেন্স ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, নীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, ইউনেস্কো নিউইয়র্ক অফিসের প্রতিনিধি এবং নিউইয়র্ক শহরের মেয়রের প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া স্প্যানিশ ভাষাভাষী ফ্রেন্ডস গ্রুপের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে নিযুক্ত কিউবার উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ভাষা বিষয়ক এনজিও কমিটির সভাপতি বক্তব্য রাখেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদগণ এবং ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম, যার চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশীর উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পূর্ণ স্বীকৃতি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত। এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাকে সম্মান জানিয়ে নতুন বাংলা ইউনিকোড ফন্ট প্রকাশ করার জন্য ইউএনডিপিকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন স্থায়ী প্রতিনিধি।

বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম একটি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও অব্যাহত রেখে যাবেন বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।

সাধারণ পরিষদের সভাপতিসহ অন্যান্য বক্তাগণ জাতিসংঘে বহুভাষাবাদ ও মাতৃভাষার প্রচারে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘ চেম্বার মিউজিক সোসাইটি, শ্রী চিন্ময় গ্রুপ এবং ভারতের স্নেহ্ আর্ট নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন এতে অংশগ্রহণ করে। জাতিসংঘ ওয়েবটিভিতে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের আগে সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধির নেতৃত্বে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ মিশনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানটিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। সবশেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দ এবং মহান একুশের ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
এদিকে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদায় মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post রাষ্ট্রভাষা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, স্বীকৃতি শেখ হাসিনার হাত ধরে: সেতুমন্ত্রী
Next post ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত, আহত শতাধিক
Close