Read Time:7 Minute, 7 Second

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করছেন রাজনৈতিক নেতারা। ক্ষমতাসীনেরা বেশ খোশ মেজাজে আছেন। আর বিএনপি নেতারা সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে তিনি বাইডেন প্রশাসনের নীতিকেই স্পষ্ট করেছেন। সামনের দিনগুলোতে সম্পর্কের ব্যাপারে এগুলোই মূল নিয়ামক হবে। তিনি রাজনীতি নিয়ে যা বলেছেন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ আছে। হয়তো তিনি উচ্চস্বরে কিছু বলেননি, কিন্তু কূটনীতির ভাষা বুঝলে তার মধ্যে অনেক কিছু পাওয়া যাবে।

তিনি যৌথ ব্রিফিং-এ সরাসরি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একটা কমিটমেন্ট আছে, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। আমরা যখন সমস্যা দেখি, তখন কথা বলি, পরামর্শ দেই। আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলি। আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।’

বিশ্লেষকদের কথা, এখানেই তিনি স্পষ্ট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যতই বিরক্তি প্রকাশ করা হোক না কেন, যতই এগুলোকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলা হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ব্যাপারে কথা বলবেই।

সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা যায় তার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল বিএনপি নির্বাচনে আসবে কী না, সেই প্রশ্ন। আর না আসলে কী হবে তাও জানতে চান তিনি। সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

সফরের শেষ দিনে ডোনাল্ড লু ঢাকার দুইটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছে। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘বিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করার অধিকার দিতে হবে এবং কথা বলার মুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে।’

নির্বাচন নিয়ে লু বলেছেন, ‘একটি গ্রহণযোগ্য, সব দলের উপস্থিতিতে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’ তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ আলোচনার কথাও বলেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, ‘গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত পররাষ্ট্র নীতি। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সব দেশের জন্য। মার্কিন সহকারী মন্ত্রী ঢাকা সফরে তা পরিষ্কার করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। সামনের দিনগুলোতে তারা এই ইস্যু নিয়ে আরও কথা বলবে। পর্যবেক্ষণে রাখবে।’

ঢাকা সফরে এসে বাংলায় কথা বললেন ডোনাল্ড লুঢাকা সফরে এসে বাংলায় কথা বললেন ডোনাল্ড লু
তিনি বলেন, ‘তবে এবারের সফরে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট যে আগে শক্তিধরেরা যেভাবে চাপিয়ে দিতেন সেই দিন আর নেই। এখন তারা তাদের নীতি নিয়ে কাজ করেন কনভিন্সিং মুডে। আমাদের মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিধর দেশ।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার মনে হয় মার্কিন সহকারী মন্ত্রী বাংলাদেশে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনে এসেছিলেন। দেখবেন তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন, জানতে চেয়েছেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন নিয়ে। তিনি জানতে চেয়েছেন বিএনপি নির্বাচনে আসবে কী না? না আসলে কী হবে? আমাদের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।’

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেফারেন্স কী, তারা কী পছন্দ করে তা তিনি বলে দিয়েছেন। আর সেটা হলে গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্রের মধ্যে আছে নির্বাচন, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, শ্রম অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার। গণতন্ত্রকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন, যেখানে সব ধরনের অধিকারের কথা আছে। বাংলাদেশে এটাই সঞ্চারিত হোক তিনি তা চেয়েছেন।’

‘এখন বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক হোক বহুপাক্ষিক হোক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই তাহলে এটা আমাদের করতে হবে,’ মনে করেন সাবেক এই কূটনীতিক।

তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের কথাই ধরুন, তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর র‌্যাব ইতিবাচক দিকে এগিয়েছে তাই নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি। এটা একটা ম্যাসেজ। এখন যদি নির্বাচন, গণতন্ত্র, অধিকার নিয়ে আমরা ইতিবাচক পথে হাটি তাহলে তারা এটা ভালোভাবেই নেবে। না হাটলে তারা সেটাকে ভালোভাবে নেব না। তাদের পথে হাটবে।’

তার কথা, ‘এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বুঝে আমরা যদি সেই দিকে যাই তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো হবে। অন্যথায় সন্দেহ আছে।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ক্যালিফোর্নিয়ায় বাড়িতে ঢুকে গুলি, মা-সন্তানসহ নিহত ৬
Next post ডোনাল্ড লু’র কথা শুনে বিএনপি নেতারা অসুস্থ হয়েছেন: কাদের
Close