Read Time:7 Minute, 12 Second

গ্রিসে গত এক মাসে হৃদরোগে ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ১১ জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া প্রবাসীদের বেশিরভাগের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর। দুশ্চিন্তা আর হতাশাগ্রস্থ হয়ে দেশটিতে প্রবাসীদের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব মৃত্যু যেন অনেকটাই নিয়তিতে পরিণত হয়েছে।

অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন স্বজন বিচ্ছিন্ন থাকা এবং নানা কারণে মানসিক চাপে ও হতাশায় হৃদরোগে ও স্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে অমানবিক জীবনযাপন করেছন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। কেউ কেউ সাত থেকে আট বছর বসবাসের পরও বৈধ হতে পারছেন না। অনেকের কাছে নেই পাসপোর্ট। হাতের লেখা পাসপোর্টের যুগে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করা এসব বাংলাদেশি এখন পাসপোর্ট করার সুযোগ পাচ্ছেন না। অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়মিত পুলিশি অভিযানে পাকড়াও করে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে। আবার অনেককেই বিতাড়িত করছে গ্রিস থেকে।

গত এক বছরে অর্ধশতাধিক বাংলাদেশিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে গ্রিস সরকার। হাজারো বাংলাদেশি আটক রয়েছেন দেশটির বিভিন্ন ক্যাম্পে। যারা দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাদের দিনরাত কাটছে নানা আতঙ্ক আর হতাশায়। অবৈধ প্রবাসীরা সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মৃত্যু ঘটছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গ্রিসে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মোট ১০৯ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৮৬ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি মারা গেছেন। এদের বেশির ভাগেরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ও স্ট্রোকে মারা গিয়েছেন। যদিও সীমান্তে অনেক মৃত্যুই এখনো অজানা।

বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্সের তত্ত্বাবধানে মরদেহ দেশে পাঠানো হয়েছে। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী কয়েকজনের মরদেহ দেশটিতেই দাফন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায় বেশির ভাগ ব্যক্তি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ ঋণ করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গ্রিসে এসেছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারির মন্দা পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে গ্রিসে আসার পর কর্মহীন প্রবাসীরা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে মানসিক চাপে ভোগেন। বেশিরভাগ প্রবাসীই মারা গেছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ও ব্রেন স্ট্রোকে। তাদের অনেকের বয়সই ৩০-৪০ বছর। এমন মৃত্যু পরিবারের কাছে অপ্রত্যাশিত।

বর্তমানে গ্রিসে বৈধভাবে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই অবৈধভাবে কেউ যেন কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত না হয়ে বিদেশে পাড়ি না জমান এজন্য অনুরোধ করেছেন দূতাবাসের এই কর্মকর্তা। দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা অনেকেই কোনো কাজ করার সুযোগ না পেয়ে বেকার অবস্থায় থাকেন। থাকা ও খাবারের টাকা দেশ থেকে নিয়ে পরিশোধ করেন। ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার কারণে নিয়মিত ঘুমানোর সুযোগ পান না প্রবাসীরা। এসব কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে।

গ্রিস প্রবাসী অভিবাসন বিশ্লেষক কামরুজ্জামান ভূইয়া ডালিম বলেন, করোনার কারণে গ্রিসে অনেকের কাজ ছিল না, অর্থনৈতিক সংকট ছিল। আবার অনেকে দেশটিতে পারমিট নবায়ন করতে পারেননি। তাই দেশেও পরিবার-পরিজনের কাছে যেতে পারেননি। এরপরই আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। সবকিছুর দাম বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। এসব কারণে হতাশায় প্রবাসীদের মধ্যে স্ট্রোকের ও হৃদরোগের হার বাড়ছে। অনেকে মৃত্যুবরণ করছেন যা অনাকাঙ্খিত।

গ্রিসে অবৈধ হয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়মিত বা বৈধকরণের কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ-গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তির অধীনে ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিদের বড় অংশের দুশ্চিন্তা অনেকাংশে কমে যাবে বলে বিশ্বাস করেন কমিউনিটি নেতাদের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, বৈধতা পেলে অনেকেই উপকৃত হবেন। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কর্মসূচির সফলতার ওপর। এ ক্ষেত্রে অবৈধ প্রবাসীদের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সমস্যা নিরসনে দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা ও প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post নুরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
Next post ব্রাজিলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
Close