Read Time:7 Minute, 4 Second

বিজয়ের ৫১ বছর পূরণ হলেও দেশে এখনও ৭১’র ‘শকুনি’ এবং পঁচাত্তরের ‘হায়েনার’ বংশধরেরা সক্রিয় আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহান বিজয় দিবস ২০২২ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখনও একাত্তরের ‘শকুনি’ এবং পঁচাত্তরের ‘হায়েনার’ বংশধররা সক্রিয় আছে। সুযোগ পেলেই তারা দন্ত-নখর বসিয়ে দেশটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। সাধারণ মানুষ ভালো আছে দেখলে এদের গায়ে জ্বালা ধরে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষ এদের চিনে ফেলেছে। ষড়যন্ত্র করে আর তাঁদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।

তিনি বলেন, এদের অতীত ইতিহাস দেখুন। এদের একটা অংশ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান এদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। পুনর্বাসিত হয়ে এরা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে।

মহান বিজয় দিবস ২০২২ উপলক্ষে দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকে নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন। তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারি যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল। সে সময় আমাদের রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। সে তহবিলের অর্থ দিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ দেয়া হচ্ছে ২ শতাংশ হার সুদে। ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে। এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হতো তাহলে ৪-৫ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো। আর তা পরিশোধ করতে হতো রিজার্ভ থেকেই।

তিনি বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।

রিজার্ভের ওপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও আমদানি-নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, চিনি, ভুট্টা, ডাল, রাসায়নিক সারসহ প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

তিনি বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খরচ বহুগুণ বেড়েছে। যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ ডলার তার ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার, যে গম টন প্রতি ২০০ ডলারে পাওয়া যেতো, তা ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোনো কোনো দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পৃথিবীর যেখানেই আমাদের চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করছি এবং জোগান দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের বিজয়ের ৫১ বছর পূরণ হলো। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পঁচাত্তরের পর ২৯ বছর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুটে-পুটে খেয়ে দেশটাকে খোকলা বানিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেই, সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করবো।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ‘মায়ের কান্না’য় বিব্রত মার্কিন রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ
Next post মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সমালোচনায় ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক
Close