Read Time:5 Minute, 23 Second

যুক্তরাজ্যে ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। প্রভাব পড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে। জীবনযাত্রায় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে বাসিন্দারা। এতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে নাভিশ্বাস।

এদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির কারণে পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইনসহ বিভিন্ন এলাকার বাংলাদেশি অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ব্রিটেনের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই তাদের নিত্যদিনের ব্যয় তালিকা সংকুচিত করছেন।

জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (ওএনএস) থেকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, অক্টোবর পর্যন্ত গত ১২ মাসে যুক্তরাজ্যে ভোক্তা পণ্যের দাম ১১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে গেছে। যা ১৯৮১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে ১০ দশমিক ১ শতাংশ।

ওএনএস জানায়, যুক্তরাজ্যে এখন একটি পরিবারকে বাড়িতে জ্বালানি বিল হিসেবে গড়ে বছরে আড়াই হাজার পাউন্ড ব্যয় করতে হচ্ছে। পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্য প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ‘দেশের আর্থিক অবস্থা নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে দেশের মুদ্রাস্ফীতি তাদের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করা আমাদের সবার কর্তব্য।’

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ফুড ফাউন্ডেশন ব্রিটেনের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, প্রতিদিন যুক্তরাজ্যের লক্ষাধিক মানুষ তিন বেলা খেতে পারছেন না। বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতি সাতজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো বেলা খাবার পাননি বা তাদের খাবার কেনার সামর্থ্য ছিল না। আর এমনটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে। বড় চেইনশপগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম অন্যান্য দোকানপাটের চেয়ে তুলনামূলক কম থাকে। কিন্তু এসব সুপারশপেও এখন দাম বেড়ে চলছে। বছরের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে হয়েছে দুই গুণ।

পূর্ব লন্ডনের গ্রোসারির দোকান মালিকরা জানান, প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। মানুষ আগে যে পরিমাণ কেনাকাটা করত এখন তার চেয়ে কম পরিমাণে কিনছে। সবাই ব্যয়ের তালিকা সংকোচন করছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে পড়তে আসা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তারা জানিয়েছেন, সপ্তাহে অনুমোদিত মাত্র ২০ ঘণ্টা কাজ করে তাদের জীবন পরিচালনা কঠিন। এর মধ্যে জব পাওয়াটা এখন অনেক কঠিন। অনেক জায়গায় ন্যূনতম মজুরি পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা এবং স্নায়ুবিক দুর্বলতা কারণে ব্রিটেনের চাকরির বাজার থেকে ঝরে পড়েছেন অন্তত ৬ লাখ কর্মী।

১৫ বছর ধরে পূর্ব লন্ডনে বসবাস করা সাংবাদিক মোহাম্মদ তারেক চৌধুরী ইমরান জানান, মূল্যস্ফীতির এই যে চাপ তাতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। গত বছরের তুলনায় দুধের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। পাস্তার ৩৪ শতাংশ, বাটারের ৩০ শতাংশ এবং চিজের ২৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। শুধু দ্রব্যমূল্যে নয়, ব্যয় বেড়েছে বাড়ি ভাড়াতেও। এক হাজার পাউন্ডের বাসা ভাড়া এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারের বেশিতে। ক্ষেত্র বিশেষে এর পরিমাণও আরও বেশি।

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে কখনো এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেনি কমিউনিটির মানুষ। জিনিসপত্রের যে হারে দাম বেড়েছে তাতে লন্ডন শহরে বসবাস করা সত্যি কঠিন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বিশ্বব্যাংকের ‘গভটেক লিডারস’ তালিকায় বাংলাদেশ
Next post সৌদিতে হৃদরোগে ২ বাংলাদেশির মৃত্যু
Close