গত প্রায় ১৮ মাস ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থী বেসামরিক জনগণের মধ্যে যে অস্থিরতা ও সংঘাত চলছে, দ্রুত তার সমাধান না হলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসে (আসিয়ান) ‘একঘরে’ করা হবে দেশটিকে।
এই ‘একঘরে’ করার অর্থ— আসিয়ানের কোনো কর্মকাণ্ডে আর মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করা হবে না, এমনকি এই সংস্থার বৈঠকেও দেশটিকে আর ডাকা হবে না।
শুক্রবার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে আসিয়ানের যে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, সেখানে আরও বলা হয়— এক বছর আগে মিয়ানমারে শান্তি স্থাপন সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় যে ৫টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছিল আসিয়ান, সেসব বাস্তবায়নে আর কত সময় লাগতে পারে তা ও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে ক্ষমতাসীন সেনা সরকারকে।
বৈঠক শেষে আসিয়ান থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব তথ্যের উল্লেখ রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ দিনের বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনির জন্য বরাদ্দ আসনটি খালি ছিল।
আসিয়ানের অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেত্নো মারসুদি গত সপ্তাহে মিয়ানমারে অশান্তির জন্য ক্ষমতাসীন জান্তাকে এককভাবে দায়ী করেছিলেন। শুক্রবারের বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আজ যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো, তা জান্তার জন্য একটি কঠিন বার্তা। একে হুমকি হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।’
সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবশ্য আসিয়ানের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানানো হয়েছে। পাল্টা এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শান্তি স্থাপনে আসিয়ানের প্রস্তাবনা ‘বাস্তবসম্মত নয়’। এর আগেরবার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে যখন আসিয়ানের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সে সময় জান্তার উত্তর ছিল— মহামারি ও সামরিক বাহিনীবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর কারণে শান্তি স্থাপনে বিলম্ব হচ্ছে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকারকে উচ্ছেদ ও সুচিকে কারাবন্দি করে দেশের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।
তারপর প্রায় দু’ বছর ধরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা সংকটে জর্জরিত হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। দেশটিতে ফের কবে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে— তা পুরোপুরি অনিশ্চিত।
তবে আসিয়ানের এই পদক্ষেপ খুব বেশিদূর অগ্রসর হবে— এমন কোনো আশা দেখছে না আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের কর্মকর্তা প্যাট্রিক ফোংসাথোর্ন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসিয়ান কিন্তু মিয়ানমারকে এখনও বহিষ্কার করেনি। যদি এমন কোনো পদক্ষেপ এই সংস্থা নিতো, তাহলে সেটি হতো জান্তার ওপর বড় ধরনের আঘাত।’
সূত্র : রয়টার্স
More Stories
মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে
মিয়ানমার জান্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা আসছে। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। জাকার্তায় সাংবাদিকদের সঙ্গে...
যুদ্ধাপরাধ বন্ধে পুতিনকে চাপ দিতে জিনপিংকে আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে চাপ দিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা...
সমঝোতায় প্রস্তুত রাশিয়া, শিকে পুতিন
রাশিয়া সফররত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ক্রেমলিনে স্বাগত জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সোমবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে ক্রেমলিনে পৌঁছান...
বাড়িতে ‘হামলাকারী’ পুলিশদের দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি ইমরান খানের
এবার পুলিশকে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। ইমরান খান বলেন, লাহোরে তার...
পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে মস্কো যাচ্ছেন জিনপিং
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মস্কো সফর করবেন। শুক্রবার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে...
ইমরানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিরুদ্ধে জারি করা জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করেছেন ইসলামাবাদ...