কাজী মশহুরুল হুদা, প্রবাস বাংলা।
গত ১৬ অক্টোবর ২০২২ ‘বাংলার বিজয় বহর’এর এক যুগপূর্তি উপলক্ষ্যে লিটল ঢাকা রেস্টুরেন্টে বার্ষিক পুণর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতি দেখা যায়।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাংলার বিজয় বহরের তারিখ নির্দ্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর( শনিবার ও রবিবার) ২০২২।
কিন্তু এতে প্রশ্নের শেষ নেই! থাকতেও কি পারে? এ’নিয়ে প্রবাস বাংলার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
অনেকেই মনে করেন বাংলার বিজয় বহর একটি বিতর্কিত কার্যক্রম। তারা মনে করেন বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন করবেন কিন্তু বিজয়ের কারণকে মানবেন না- তা কি করে হয়? এটা কেমন উদযাপন?
তার মানে ‘ডাল মে কুচ কালা হায়’? যারা এ ধরণের কথা বিশ্বাস করেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, সাক্ষাৎকার নিয়েছি। কারণ, বাংলার বিজয় বহরের পূণর্মিলনীতে তাদের অনেকেই দৌঁড়িয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। জাতীয় চেতনার ক্ষেত্রে অনেকেই স্বার্থের কারণে নতজানু মনভাব প্রকাশ করেছেন। আমার প্রশ্ন ছিল বাংলার বিজয় বহর বাংলাদেশের বিজয়ের উল্লাস। এতো দেশাত্মবোধক কার্যক্রম। সেখানে দ্বিমত হওয়ার তো কোন অবকাশ থাকার কথা না? অথচ এখানেও দেখছি বিভেদ। কিন্তু কেনো?
গত বছর আওয়ামী পরিবারের কেউ বিজয় বহরে অংশগ্রহণ করেনি (দু’একজন ব্যাতিক্রম) এবং সুশীল সমাজের অনেকেই অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য হল, বাংলাদেশে দু’ধরণের নাগরিকের বসবাস। এক পক্ষ ভূগোল নিয়ে পড়ে আছে। তারা দেশের ভৌগলিক সার্বভৌমত্বকেই শুধুমাত্র স্বীকার করেন। আর এক পক্ষ হল ইতিহাসের। তাদের কথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তার ভিত্তিতে রয়েছে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা স্বাধীনতা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে অর্জন করেছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। এটা বাংলাদেশের ইতিহাস। এই ইতিহাস যারা মানেনা অথচ সার্বভৌমত্বকে শুধুমাত্র মানতে চান তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নন। তাদের সাথে একযোগে কাজ করা অর্থ জন্মের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করা। আর সেই জন্য গত বছর অনেক মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেননি। অনেক নেতৃত্বস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে- তাহলে কেনো তাদের অনেকেই বাংলার বিজয় বহরের পূর্ণমিলনিতে গিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করলেন?
প্রশ্নের উত্তর জানা যায় পূর্ণমিলনিতে অংশগ্রহণ মানে বাংলার বিজয় বহরে অংশগ্রহণ করা হবে এমনটি নয়। তাহলে কি করলে একপক্ষ সম্মিলিত ভাবে বিজয়ের গাঁথা উদযাপন করা সম্ভব হবে? তার প্রতিউত্তরে জানা যায়- উদযাপনকারীদেরকে প্রমাণ করতে হবে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
আমাকে অন্যতম একজন সুশীল ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বললেন, আপনি রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করবেন, অথচ রবীন্দ্রনাথের ছবি টাঙাবেন না তা তো হতে পারে না। আপনি বাংলাদেশের বিজয় দিবস পালন করবেন অথচ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করবেন না তাতো হতে পারে না। আয়োজকবৃন্দ যদি আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে তার ছবি টাঙিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তাহলে বুঝবো তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। সেক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত হবে। তারা যদি ইতিহাসকে অস্বীকার করে রাজাকারী চিন্তাচেতনাকে প্রাধান্য দিয়ে ভৌগলিক সার্বভৌমত্বের কারণে বিজয় দিবস উদযাপন করে এবং প্রকৃত ইতিহাসকে উপেক্ষা করে তাহলে তারা বাঙালী জাতির শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তাদের সাথে একযোগে কাজ করার প্রশ্নই ওঠে না।
More Stories
বিজয়ের ৫৫ বছরে লস এঞ্জেলেসে কমিউনিটির প্রাপ্তি
- কাজী মশরুল হুদা বিজয়ের ৫৫ বছর হতে চলেছে। প্রায় ২ কোটির মত প্রবাসী বাংলাদেশী বিশ্বজুড়ে বসবাস করছে। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে...
গণঅভ্যুত্থানের সময় আমিরাতে আটক ২৪ বাংলাদেশি মুক্তি পাচ্ছেন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংহতি প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক হওয়া আরও ২৪ বাংলাদেশি নাগরিক মুক্তি পাচ্ছেন। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর)...
থাইল্যান্ডের ই-ভিসা নিয়ে সতর্কবার্তা দূতাবাসের
বাংলাদেশের কয়েকটি এজেন্সি ২-৩ ঘণ্টায় থাই ই-ভিসা পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। যা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ঢাকাস্থ রয়েল থাই দূতাবাস।...
মামদানির জয়ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জারা রহিম
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। কিন্তু তার এই ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্যে ছিলেন...
বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের ভিসা গণহারে বাতিলের ক্ষমতা চাইছে কানাডা
কানাডার সরকার বিদেশিদের গণহারে ভিসা বাতিলের ক্ষমতা পাওয়ার চেষ্টা করছে। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভারত ও...
দুই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে প্রত্যর্পণে কাজ করছে মালয়েশিয়া
বেস্টিনেটের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম বিন আমিন নূর এবং তার সহযোগী রুহুল আমিন স্বপনের প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ নিয়ে কাজ...
