Read Time:6 Minute, 57 Second

দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে হঠাৎ কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে উঠল জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষ। মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে বিএনপিদলীয় সদস্য হারুনুর রশীদ এ খাতে হরিলুট ও ভয়ানক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলেন। জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ খাতে বিএনপি আমলের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে।’

দুজনের এ বক্তব্যকালে সংসদে ব্যাপক হইচই ও শোরগোল শুরু হয়। সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে সমর্থন জানান। আজ মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই বলে স্পিকারের চেয়ার থেকে বিএনপির হারুনের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করেন শিরীন শারমিন চৌধুরী।

হারুনুর রশীদ সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী প্রশ্নোত্তরে বারবার বিএনপি-জামায়াতের কথা টানছেন। বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের দাম কী ছিল? প্রতিমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত সরকারের কথা কমপক্ষে ৫০ বার বলেছেন। আপনি জানাবেন- বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম কত ছিল? কেন ১৫ বছর ধরে দায়মুক্তি বজায় রেখেছেন।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে হরিলুট ও ভয়ানক অব্যবস্থাপনা চলছে। একদিন সময় নিয়ে সংসদে দীর্ঘ আলোচনা করতে হবে। ভূতের মুখে রাম নাম গল্প আর শোনায়েন না।’

হারুন বলেন, ‘বিএনপি সরকার গ্যাসের যে চুক্তি করেছে- সেটা প্রতিমন্ত্রীর কাছে আছে কিনা? সেটা সংসদে উপস্থাপন করুন। বিএনপির আমলে নিত্যপণ্যের দাম কত ছিল, তার উত্তর দিন। শুধু বিএনপি জোট সরকারের সময় এই হচ্ছে, ওই হচ্ছে গল্প শোনাচ্ছেন।’

স্পিকারের কাছে সংসদে জ্বালানি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে হারুন বলেন, ‘প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রতিমন্ত্রী যেভাবে বিবৃতি দিচ্ছেন, এটা হয় না। মানুষ বিদ্যুৎ নিয়ে হাহাকার করছে। জ্বালানি উপদেষ্টা বলছেন- দিনের বেলা বন্ধ রেখে রাতে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। বিদ্যুতের দাম ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আশ্বাস জনগণকে দেন।’

জবাব দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘প্রশ্নকর্তা অনেক উত্তেজিত হয়ে গেছেন। অনেকে সত্য কথা সহজে নিতে পারেন না।’ জ্বালানি নিয়ে কথা বলার জন্য তিনি সংসদের সময় নির্ধারণের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘নাইকো মামলা নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। তাঁদের নেতা তারেক জিয়ার বন্ধু এফবিআইর কাছে যে পরিমাণ ওপেন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেগুলো আমরা দেখাব। সে সময় আমি তাঁর (হারুনের) বক্তব্য শুনতে চাই, তিনি কী বলেন। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টে যে পরিমাণ টাকা চুরি করা হয়েছে, সেগুলোর প্রমাণপত্র আমাদের হাতে আছে। সেগুলোই ডকুমেন্টসহ সংসদের ভিডিও স্ট্ক্রিনে তাঁদের দেখানো হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খাম্বা কোম্পানি দিয়ে তারেক রহমান যে পরিমাণ লুটপাট করেছেন, তার হিসাব আমাদের কাছে আছে। সেই তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। সময় হলে সব বের করব। নির্বাচন সামনে আসছে তো, প্রস্তুত থাকেন। সব দেখাব। বিএনপি জোট সরকারের সময় অন্ধকারে ১৭ ঘণ্টা থাকতে হতো। উনি বিদ্যুতের দামের কথা বলেন। আরে, অন্ধকারে থাকার যে খরচ, সেই খরচের কথা বলেন। বিএনপির সময়ে বিদ্যুতের সিস্টেম লস কত ছিল? উনি ভুলে গেছেন। ৪৪ শতাংশ অপচয় ছিল। এটা দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন কি খামোখা হয়েছে তারা?’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়। বাংলাদেশ উদাহরণ হয় বিশ্বের কাছে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে। আর উনারা করেছেন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শেষ হয়ে যাবে যদি বক্তব্য দিতে হয় তাঁদের ব্যাপরে। কোনো প্রয়োজন নাই। চাল, ডাল, গমের কী দাম ছিল? আরে ভাই, আপনারা তো খাদ্যই দিতে পারেন নাই। গুলি করে মানুষ মেরেছেন; আবার দামের কথা জিজ্ঞেস করেন! আপনারা বিদ্যুৎই দিতে পারেন নাই ১৮ ঘণ্টা। কানসাটে গুলি করে মানুষ মেরেছেন। আমার এখনও খেয়াল আছে; সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া টঙ্গীতে গেছেন বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করতে। তিনি ঢাকায় পৌঁছাতে পারেননি, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।’

এ সময় বিএনপির সংসদ সদস্যদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে সংসদে কথা না বলার অনুরোধ করেন নসরুল হামিদ বিপু। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, কোন মুখে আপনারা কথা বলার সাহস করেন! হয়তো লজ্জা-শরম আপনাদের মাঝে নেই।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ফোবানার ইসি মিটিং এ ইউথ চ্যাপ্টারের কার্যক্রমের ঘোষণা
Next post তিন নন্দ ঘোষের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে সরকার: রুমিন ফারহানা
Close