Read Time:8 Minute, 28 Second

ভারতের ‘আনুকূল্যে’ সরকার টিকে আছে কিনা প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গত পরশুদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েছেন, হুংকার দিয়েছেন, সন্ত্রাসী ভাষায় কথা-বার্তা বলেছেন। এতোই যদি আপনারা হুমকি দেন, ধামকি দেন তাহলে আবার আপনাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আপনাদের সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, প্রধানমন্ত্রীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সাহায্য দাবি করেন কেনো?

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় গত বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ছিলেন বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফজলুল হক মিলন প্রমুখ।

ফখরুল বলেন, আমরা এই কথাটার (পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য) ব্যাখ্যা চাই। আমরা জানতে চাই এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছেও যে, আজকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী যে কথা বলেছেন সেই কথার অর্থ কী? তাতে কি এটা দাঁড়ায় এই সরকার টিকে আছে ভারতের আনুকূল্যে ? একথার অর্থ মানুষ তো জানতেই চাইবে। এটা জরুরী কথা।

তিনি বলেন, আজকে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে মানুষের অধিকারগুলো ফিরিয়ে এখানে একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবে কি করবে না।

আজকে এই প্রশ্নগুলো কেনো এসেছে। কারণ আমরা দেখলাম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সমস্ত অধিকারগুলোকে তারা কেড়ে নিয়েছে, সংবিধানকে পরিবর্তন করেছে, মানুষের যে পাঁচ বছর পরপর একদিন ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবার যে সুযোগ ছিলো, সেই ভোট দেয়ার ক্ষমতাকে হরণ করে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে তারা বাতিল করে দিয়েছে।

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। বিএনপি মহাসচিব বিকালে মিলনায়তন প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

এর আগে সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে।

‘জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতি প্রসঙ্গে’
বাংলাদেশে গুমের ঘটনাসমূহের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলে এর দেয়া বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি এখানে এসে যাওয়ার আগে একটা বিবৃতিতে পরিস্কার করে বলেছেন, এখানে র‌্যাবের হাতে যে গুম হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তার সমস্ত প্র্রমাণ এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এটার বিচার করা দরকার। এদের অবশ্যই স্বাধীন তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

এই কথার পর থেকে তাদের শরীরে যে বিছুটি ছিটাই না, ওই বিছুটি ছুটে গেছে। একজন মন্ত্রী যিনি তথ্যমন্ত্রী বোধ তিনি ওই হাই কমিশনারকে সবক দিচ্ছে যে, আপনি প্যালেস্টাইন দেখেন, বার্মা দেখেন। আরে আগে আপনি বাংলাদেশ দেখেন। এই বাংলাদেশের কত হাজার মানুষ আপনি হত্যা করেছেন, কত মানুষকে আপনি গুম করেছেন।

গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের ইলিয়াস আলীর আজকে তার ছেলের বিয়ে আছে। কত বছর হয়ে গেছে এই ইলিয়াস আলীকে আপনারা গুম করেছেন তার খবর পাওয়া যায়নি। লাকসামের পারভেজকে আপনারা গুম করেছেন, অনেক ছাত্র নেতাকে আপনারা গুম করেছেন। তাদের মায়েরা চেয়ে থাকে কখন তার ছেলে ফিরবে? এই সরকার তাদের মায়েদের বুক খালি করেছে।

আমরা অবিলম্বে গুম হওয়া মানুষদের খোঁজ চাই, আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। নিশ্চয় ওই নেত্র নিউজ আপনারা সকলে দেখেছেন, আয়নাঘর দেখেছেন। আমরা জানতে চাই এই আয়নাঘর কতটুকু সত্যি, কিবা আছে তা বলতে হবে। জনগন জানতে চায়।

‘ক্ষমতা ছাড়ুন’
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতো চ্যালেঞ্জ করবেন না। ক্ষমতা ছাড়ুন, ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় নামুন। দেখা যাবে এদেশে জনগনের শক্তি বেশি না আপনাদের মতো দুর্নীতিবাজদের শক্তি বেশি। অবশ্যেই আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ক্ষমতায় থেকে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা যায়। ক্ষমতা ছেড়ে আসুন তখন বুঝা যাবে আপনার শক্তি কত?এদেশে কয়টা লোক আপনার পক্ষে আছে তখনই বুঝা যাবে। এরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে, এরা বাংলাদেশের গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। এরা এখন বাংলাদেশের মানুষের শত্রু বন্ধুগণ।

‘সরকারকে আর সময় নয়’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারকে আর কোনো সময় দেয়া যাবে না, আমরা আওয়ামী লীগে আর কোনো সময় দিতে রাজি নই, এই সরকারকে আর কোনো সময় দেয়া হবে না। এখন জনগনের ঐক্য গড়ে তুলে একই সঙ্গে রাস্তায় রাজপথ দখল করে নিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করব এবং এই সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশনর গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার ও জনগনের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। আজকে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জনগনের কাছে আহবান- আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ক্ষমতায় টিকে থাকতে আ.লীগ ভারতকে কখনো অনুরোধ করেনি : ওবায়দুল কাদের
Next post কিছু দুষ্ট লোক তিলকে তাল বানায় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Close