মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের মূল লক্ষ্য ছিল তাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা— এই অভিযোগের বিরুদ্ধে যে আপত্তি এতদিন জানিয়ে আসছিল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, শুক্রবার তা খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
শুক্রবার মামলার শুনানি শেষে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের এই আদালতের প্রেসিডেন্ট (প্রধান বিচাপতি) জন. ই. ডোনোগুয়ে জানান, জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল সরেজমিনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছে এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা যা হয়েছে, সেসব ১৯৪৮ সালে গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সুস্পষ্ট লক্ষণ।
‘সুতরাং মিয়ানমারের দাবির কোনো বাস্তবভিত্তি না থাকায় তাদের আপত্তি খারিজ করা হলো।’
আরও পড়ুন :আন্তর্জাতিক আদালতে ফের শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি
২০১৭ সালে আরাকানে কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে বোমা হামলা করার অভিযোগ ওঠে সশস্ত্র রোহিঙ্গাগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে। এই হামলার জের ধরে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হামলা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সামনে টিকতে না পেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশে পালাতে শুরু করে। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমারে জাতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতেই ২০১৭ সালে এই গণহত্যা চালিয়েছিল দেশটির সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর এই নিষ্ঠুর নির্যাতনের জেরে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
কিন্তু মামলার শুরু থেকেই মিয়ানমার পক্ষের সাংবাদিকরা বাদিপক্ষ গাম্বিয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল— আন্তর্জাতিক আদালত কেবল রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার মামলা গ্রহণ করে। গাম্বিয়া যেহেতু কোনোকালেই মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না এবং যেহেতু এই দেশটিকে সহায়তা দিচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসি, সুতরাং আদালতের উচিত এই মামলা বাতিল ঘোষণা করা।
তবে শুক্রবারের শুনানিতে আদালতের প্রধান বিচারপতি জন. ই. ডনগুয়ে বলেন, ‘কোনো রাষ্ট্র যদি জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘণ করে, সেক্ষেত্রে ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের যে কোনো সদস্যরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।’
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
More Stories
পারমাণবিক বোমা তৈরির হুঁশিয়ারি দিলো ইরান
সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ইরানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে তেহরানের পারমাণবিক বোমা তৈরি করা ছাড়া উপায়...
চার দশকের মধ্যে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কে ফাটল
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে মৈত্রী সম্পর্ক বহুদিনের। গাজায় গত অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলের হামলায় সমর্থন দিয়ে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো...
রাফাহ’র পূর্বাঞ্চল ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক
ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো শুক্রবার রাফাহ শহরকে পূর্ব ও পশ্চিম অংশে বিভক্তকারী প্রধান রাস্তা দখল করেছে। দক্ষিণ গাজা উপত্যকার শহরটির পুরো পূর্বাঞ্চল...
স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনে বাংলাদেশসহ ১৪৩ দেশের ভোট
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে বাংলাদেশ ১৪৩টি দেশ ভোট দিয়েছে। শুক্রবার (১০ মে) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই প্রস্তাবটি উত্থাপিত...
বাইডেনের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে রাফায় হামলা চালালো ইসরায়েল
গাজার দক্ষিণের শহর রাফায় হামলা চালালে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হুঁশিয়ারি উপেক্ষা...
অর্থনীতি বাঁচাতে গাঁজা চাষে ঝুঁকছে পাকিস্তান
মায়ের পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালে ভারতে গিয়েছিলেন আমির ধেধি। ভারতীয় ডাক্তাররা তার মায়ের ব্যথা নিরাময়ে ক্যানাবিডিওল (সিবিডি) তেল...