Read Time:6 Minute, 23 Second

মানব পাচার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনের র‌্যাংকিংয়ে তৃতীয়বারের মতো একই জায়গায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০০ সালের ট্র্যাফিকিং ভিকটিমস প্রটেকশন আইনের (টিভিপিএ) বাধ্যবাধকতা মেনে প্রধানত যে তিন স্তরে দেশগুলোকে ভাগ করা হয়, সেটার দ্বিতীয় স্তরে (টিয়ার-২) রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে।

এর অবস্থানে রাখার ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশ সরকার পাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান পূরণ করতে পারেনি, তবে সেটি করার স্বার্থে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে।

“পাচারবিরোধী কার্যক্রমে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব সত্ত্বেও সার্বিকভাবে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ কারণে বাংলাদেশ ‘স্তর-২’-এ থাকছে।”

সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, যেসব দেশ মানব পাচার নির্মূলে টিভিপিএ’র সর্বনিম্ন মান পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করতে পারে, সেগুলোকে রাখা হয় ‘স্তর-১’ এ।

আর টিভিপিএ’র সর্বনিম্ন মান রক্ষা করতে না পারা এবং এক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া দেশগুলোকে রাখা হয় সর্বনিম্ন ‘স্তর ৩’-এ।

দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয় ওইসব দেশকে, যেগুলো টিভিপিএ’র সর্বনিম্ন মান পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি; তবে সেগুলো প্রতিপালনে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের মাঝামাঝিতে আরেকটি তালিকায় ‘টিয়ার ২ ওয়াচলিস্টে’ কিছু দেশকে রাখা হয়। এতে পরিস্থিতি উন্নতি না করে ভুল দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং তৃতীয় ধাপে নেমে যাওয়ার শঙ্কার মধ্যে থাকে এমন সব দেশকে রাখা হয়।

বাংলাদেশ ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মানবপাচার প্রতিবেদনে নজরদারিতে থাকা দেশের তালিকা ‘টিয়ার ২ ওয়াচলিস্টে’ ছিল।

ওই বিফ্রিংয়ে বলা হয়, মানবাধিকার প্রতিবেদন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও গুরুত্বের বিবেচনায় মানব পাচার প্রতিবেদন এগিয়ে থাকে। এটা একমাত্র প্রতিবেদন যেখানে দেশগুলোকে র‌্যাংকিংয়ের আওতায় আনা হয় এবং এর ‍উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার তারতম্য ঘটে থাকে।

দূতাবাস কর্মকর্তারা বলেন, কংগ্রেসে প্রতিবেদন জমা হওয়ার কারণে তৃতীয় ধাপে থাকা দেশগুলোর উপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। তাদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘নন-হিউম্যানিটারিয়ান ও নন-ট্রেড’ বিষয়ক সহায়তার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আসতে পারে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র যে সহায়তা দেয়, তা অতিমাত্রায় কমে আসতে পারে।

মানব পাচার প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরে জানানো হয়, প্রতিবেদনে থাকা বেশির ভাগ তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকারগুলোর কাছ থেকে নিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা দূতাবাস অন্যান্য সংস্থা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে ওই তথ্য মিলিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, “বাংলাদেশে এসব তথ্য পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা কাজ করি। এরপর বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গেও তথ্য সংগ্রহের জন্য কথা বলি।”

মিয়ানমারের নাগরিক হলেও প্রতিবেদনে পাচারের শিকার রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে দূতাবাস কর্মকর্তারা বলেন, “সমস্যার পরিধি বা সংখ্যা নিয়ে প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করি না।

“বাংলাদেশ থেকে বা বাংলাদেশের দিকে কত মানুষ পাচারের শিকার হয়, তা নয়; বরং সমস্যা মোকাবেলায় সরকার কী করছে, তা প্রতিবেদনে আসে। প্রতিবেদনে আমরা বলি, সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সরকারের করার জন্য আমাদের কী কী সুপারিশ আছে। রোহিঙ্গাদের পাচার মোকাবেলার জন্য আইওএমসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ প্রতিবেদনে আসে। আমরা যেহেতু সংখ্যার হিসাব করি না, সেহেতু রোহিঙ্গাদের সংখ্যার বিষয় এখানে প্রযোজ্য নয়।”

বিশ্বব্যাপী মানব পাচারের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এটি একটি বড় ইস্যু। আড়াই কোটি ব্যক্তি মানব পাচারের শিকার হন। বার্ষিক ১৫ হাজার কোটি ডলারের লেনদেন হয় এর মাধ্যমে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ইতা‌লির রাষ্ট্রপ‌তি-প্রধানমন্ত্রীকে আম উপহার পাঠালেন শেখ হাসিনা
Next post ওয়াশিংটনে মিলিত হলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি
Close