Read Time:7 Minute, 22 Second

ভালো বেতন, ভালো চাকরি বা ইউরোপের অন্য দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের সাইপ্রাসে নিয়ে আসছেন দালালরা। কিন্তু আসার পর স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে অনেকের। ডয়চে ভেলের কাছে তেমন অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছেন বেশ কয়েকজন প্রবাসী।

সাইপ্রাসের লিমাসলে বসবাস করছেন বাংলাদেশের ইকবাল হোসেন। ২০১৬ সালে ছয় লাখ টাকার বেশি খরচ করে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কাতার হয়ে আসেন তুরস্ক অধ্যুষিত টার্কিশ রিপাবলিক অব সাইপ্রাসে। এরপর সেখান থেকে আরেক দালালের মাধ্যমে আরও টাকা খরচ করে পৌঁছান ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ সাইপ্রাস রিপাবলিকে। দালাল তাকে কথা দিয়েছিল সাইপ্রাসে আনার পর বৈধ কাগজপত্র তৈরি করে দিয়ে ইউরোপের অন্য দেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিবে। কিন্তু সময় পার হওয়ার সঙে ইকবাল বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। বাংলাদেশি সেই দালাল ততদিনে পাড়ি জমিয়েছেন দেশে।

ইকবাল বলেন, আমার মতো বহু লোককে দালাল এমন লোভ দেখিয়েছে। দালাল আমার কাছ থেকে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে। সে আমাকে বলেছে আমাকে বৈধ করে দিবে। কিন্তু সে আসলে টাকা নেয়ার ফন্দি করে। এই উপায়গুলো সবাই জানে। সে শুধু আমার টাকা নয় ৫০-৬০ জনের টাকা নিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছেন। তার বিরুদ্ধে এরইমধ্যে কুমিল্লা দক্ষিণ সদর থানায় জিডি করেছি।

‘অবৈধ উপায়ে আসলে মহাবিপদ’

সব মিলিয়ে ১২ লাখ টাকার বেশি খরচ করে আসা ইকবাল বলেন তার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে। এখন তিনি ঋণ পরিশোধ করে দেশে ফিরতে চান। কিন্তু সমস্যা হলো আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে তিনি ভালো কোনো চাকরি পাচ্ছেন না। যেসব কাজ পাচ্ছেন সেগুলো তার পক্ষে করাও সম্ভব হচ্ছে না।

লিমাসলে বসবাস করা আরেক বাংলাদেশি শিবলি আহমেদ অবশ্য জানান তিনি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো আছেন সেখানে। দেশটির শহরগুলোতে বসবাসরতরা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা রোজগার করতে পারেন। কিন্তু সেখানকার আইনের কারণে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রাথীরা দীর্ঘদিন কাজের সুযোগ পাননি বলে জানান তিনি। এখন কতদিন কাজের সুযোগ পাবেন তা নিয়েও আশঙ্কা আছেন শিবলি। তিনি প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশ থেকে নর্থ সাইপ্রাসে আসেন। তাকেও দালালরা ভালো চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে আসেন।

শিবলির মতে, সেই প্রতিশ্রুতির কোনোটাই তারা পূরণ করেনি। এখানে আসার পর আমরা খুব কষ্ট করেছি। আমি যেটা বুঝতে পেরেছি অবৈধ উপায়ে কেউ এ দেশে আসলেই মহাবিপদ। এখন যেটা হচ্ছে রাতের আঁধারে উত্তর সাইপ্রাস থেকে অভিবাসীরা দালালের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করে। যদি পুলিশ ধরতে পারে তাহলে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দুই তিন মাস পর দেশে প্রত্যাবর্তন করানো হয়।

এই অভিবাসীরা বলেন ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকেই সাইপ্রাসে বৈধ উপায়ে কাজের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারছেন অভিবাসীরা। কিন্তু বাংলাদেশিরা বাধ্য হচ্ছেন অনিয়মিতভাবে আসতে।

বৈধ উপায়ে সাইপ্রাস

সাইপ্রাসের লিমাসলে গ্রিন ভ্যালি নামের একটি নার্সারিতে কাজ করছেন প্রায় ২৫ জন বাংলাদেশি। গোটা প্রতিষ্ঠানটিই বাংলাদেশিরা পরিচালনা করছেন। তাদের মধ্যে ১৩ বছর আগে এসেছেন মিজানুর রহমান। তারা সবাই কাজের ভিসা নিয়েই এসেছেন। তিনি বলেন, অনিয়মিত উপায়ে দালালের মাধ্যমে যারা দেশটিতে আসেন তারা প্রতারিত হন। তাদের এক কাজ দেওয়ার কথা বলে অন্য কাজ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বেতনের প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করা হচ্ছে না।

দিদার নামে সেখানে কর্মরত আরেকজন জানান, তিনি শিক্ষার্থী হিসেবে আসার পর এক পর্যায়ে বাংলাদেশে ফিরে যান। পরে পূর্ব পরিচয়ে সূত্রে কাজের চুক্তিপত্রের ভিত্তিতে ভিসা নিয়ে আবারও বৈধ উপায়ে আসেন সাইপ্রাসে। বর্তমানে তিনি ভালো আছেন বলে জানান। তবে দিদার বলেন সাইপ্রাসে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস না থাকায় কাগজপত্র নিয়ে তারা জটিলতায় পড়েন। এজন্য তাদের লেবানন দূতাবাসের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। ২০১০ সাল থেকে বসবাসরত এই নার্সারির আরেক কর্মী রানা বলেন, দূতাবাস করা হলে সাইপ্রাসে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ অনেক বাড়বে। এতে বাংলাদেশও অনেক উপকৃত হবে। এখানে ব্যবাসা ও কাজের অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা তা ব্যবহার করতে পারছি না দূতাবাস না থাকায়।

১৯ বছর ধরে সাইপ্রাসে আছেন রবিউল। তিন প্রথম এসেছিলেন শিক্ষার্থী হিসেবে। পড়াশোনা শেষ করে পরবর্তীতে ২০১৬ সালে দেশটির নাগরিকত্বও পান। এখন তিনি ব্যবসা করছেন সেখানে। রবিউল বলেন, সাইপ্রাসে অনিয়মিত পথে অভিবাসনে ভূমিকা রাখছে দেশটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও। অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসীদের কাগজপত্র ছাড়াই কাজে লাগাচ্ছে তারা। তবে তার মতে প্রযুক্তি, জাহাজ শিল্প, পর্যটনসহ অনেক খাতেই বৈধ উপায়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা দেশটিতে আসার সুযোগ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ঘাটতি থাকায় তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ
Next post পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি
Close