Read Time:8 Minute, 27 Second

ইদানিং লস এঞ্জেলেসের লিটল বাংলাদেশ অধ্যুষিত কমিউনিটির মসজিদ নিয়ে বেশ উত্তাপ চলছে। মসজিদ কমিটিকে কেন্দ্র করে দেশে ও প্রবাসে চলছে ঝগড়া, হট্টগোল, হুমকি।

আসলে মসজিদ কমিটিতে গিয়ে কি ফয়দা হয় তা আমাদের জানা নেই! তবে এটুকু বুঝি আল্লাহর ঘর রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ উপার্জনের কোন পথ নেই। যদি থাকে তবে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে নিশ্চিত।

তাহলে? বেহেশতের নিশ্চয়তার জন্য কি এসব? ফাৎনা-ফাসাদ করে কি জান্নাতে প্রবেশ করা যায়? তাহলে মসজিদকে কেন্দ্র করে কেনো মুসলমান এতো কঠোর তা আমার মাথায় আসে না।

লিটল বাংলাদেশ অধ্যুষিত কমিউনিটির মসজিদকে ঘিরে ক্যাচাল চলছে দীর্ঘদিন ধরে। অনেকে এই মসজিদকে বাঙালী মসজিদ বলেন। মসজিদ কখনও দেশীয় বা জাতীয় হয়? মসজিদ তো আল্লাহর ঘর, মুসলমানদের।

১৯০৩ সালের দিকে কতিপয় তাবলিগের মুসল্লি তাদের নিজ ইচ্ছায় আল ফালাহ মসজিদ নামে ওয়ের্স্টান্ড ও ফাস্ট স্ট্রীটে অফিস ঘর ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। নিজ তাগিদে বললাম কারণ- তাবলীগের মুসল্লিগণ তাদের কার্যক্রম ইসলামিক সেন্টার অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার মসজিদে চালু করতে গিয়ে বাঁধা প্রাপ্ত হন।

তারপর তাদের নিজস্ব মসজিদের তাগিদ অনুভব হয়। এখানে পাকিন্তান, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের মুসলমানেরা একত্রে সম্মিলিতভাবে শুরু করেছিল। পরবর্তীতে থার্ড স্ট্রীষ্ট এবং হারবার্ড এভিনিউতে (স্বদেশ রেস্টুরেন্টের পাশে) ঘর ভাড়া করে উক্ত মসজিদ স্থানান্তরিত হয়। দীর্ঘকাল এখানে মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। কমিউনিটি বড় হতে থাকে। স্বল্প স্থানের কারণে জুম্মার নামাজে জায়গা হয় না। তখন চিন্তায় আসে নিজস্ব ভবন ক্রয় করে মসজিদ স্থাপনের। এমন সময় মারুফ ইসলাম বর্তমান মসজিদ কমিটিকে জায়গার খবর দেয়। মালিক ছিলেন একজন জাপানীজ। ডাক্তার আবুল হাসেম কমিটিকে ক্রয়ের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি এবং সালেহ কিবরিয়াসহ অন্যান্য ব্যাক্তিদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৭টা ফান্ডরাইজিং অনুষ্ঠান করে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এখানে জনৈক পাকিস্তানি আমেরিকান সর্বচ্চ অর্থ প্রদান করেন। বাড়ি ক্রয় করা হয় এবং কমিটি এককভাবে এই মসজিদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। মসজিদের কোন ক্রেডিট না থাকায় শহিদুল ইসলাম এর ক্রেডিটে বাড়ী ক্রয় করা হয় এবং পরে হস্তান্তরিত হয়। দীর্ঘ বারো বছর এই একই কমিটি মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। ফলে ধীরে ধীরে ক্ষোভের জন্ম হয় কমিউনিটির মধ্যে। মসজিদের কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন নাম হচ্ছে লস এঞ্জেলেস ইসলামিক সেন্টার। কারণ মসজিদ নামে রেজিষ্ট্রেশন দূরুহ বিষয়।
লস এঞ্জেলেস ইসলামিক সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ করছে বিগত আল ফালাহ মসজিদের কার্যকরী কমিটি। অভিযোগ রয়েছে- উক্ত কমিটি কমিউনিটির কাউকে নতুন করে অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছে না এবং বিগত ১২ বছর মসজিদের কোন উন্নতিও হয়নি। আয়-ব্যয়ের কোন হিসাবও কমিউনিটি জানতে পারে না। এক কথায় সামগ্রীক অস্বচ্ছতাই বর্তমান এই ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, মসজিদ কমিটির অনুমোদন ছাড়া গ্যারেজের ভেতর অজুখানা, বাথরুম এবং রান্না ঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং খোলা স্থানের উপর ছায়া প্রদানকারী স্ট্রাকচার নির্মাণ করেছে এবং ওজুর জায়গা নির্মাণ করেছে।

তাবলীগের মুসল্লীদের দ্বারা কমিটি ও মসজিদ পরিচালিত হওয়ায় আর একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তা হচ্ছে- এখানে তাবলীগের মধ্যে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদ একটি গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত হলে অন্য গ্রুপ হারিয়ে যায়। ফলে কে বা কারা সিটির কাছে অভিযোগ করলে ইনপেক্টর ভিজিট করে অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম দেখে মসজিদের হাতে একটা টিকিট ধরিয়ে দেয় এবং গ্যারেজ এলাকায় নির্মিত সকল কিছু ‘ওজুর জায়গা, বাথরুম সহ কিচেন’ ভেঙে দেয়। এমনকি বাইরের স্ট্যাকচারের জন্য ফাইন করে এবং সিটির অনুমতি দাবী করে। অনুমতি না পেলে তাও ভেঙে ফেলতে হবে। অনুমতি ব্যাতিরেখে কার্যক্রমের জন্য অহেতুক সম্পদ নষ্ট করার জন্য কমিটিকে দায়ী করা হয়েছে। এ সবকিছুকে কেন্দ্র করেই মূলত ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যা নিয়ে আগামী ১৫ মে বাদ যোহর আসন্ন টাউন হল মিটিং এ আহ্বান করা হয়েছে। কমিটি ও কমিউনিটির বৃহত্তর স্বার্থে এ সভা। তবে এটি কিভাবে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। ফলাফল কি হবে তাও আচ করা যাচ্ছে না। এদিকে শোনা যাচ্ছে- প্রায় ৫/৬টি গ্রুপ দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে উক্ত দিনের মিটিং এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ, দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে যার যার পক্ষ থেকে। সবার একটাই কথা ফয়সালা করতেই হবে। কমিটিকে ১২ বছরের কার্যক্রমের জবাব দিতে হবে। নতুন কমিটি করতে হবে ইত্যাদি নানান বিষয় উঠে আসছে।

এত কিছু বললাম, কিন্তু এ ব্যাপারে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। কি হবে না হবে, বা কে প্রেসিডেন্ট হবেন অথবা নতুন কমিটি কিভাবে হবে? কোন কিছু নিয়েই আমার মাথা ব্যাথা নেই। তবে একটা বিষয়ে চিন্তা আছে সেটা হলো- উক্ত জনসভায় কেউ উত্তেজনা, ক্রোধ বা ভায়োলেন্ট সৃষ্টি যেনো না করে। সবাই যেনো মসজিদের আদব-কায়দা রক্ষা করে।

আলোচনার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে সমাধাণ করতে হবে। দেশীয় কায়দায় যেন কেউ অতীতের মত ব্যাবহার না করেন। সবাই যেনো মুসলমানের বৈশিষ্ট রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন এটাই কাম্য।

যদিও শৃঙ্ক্ষলা রক্ষায় এ সভাকে কেন্দ্র করে বর্তমান কমিটি শরিফ নিয়োগ দিচ্ছেন। তথাপি এমন কোন ঘটনার অবতারণা যেনো না হয় যে, তার জন্য আইন শৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর হাতে পড়তে হয়। আইনের দেশে মেনে, উত্তেজনা প্রশমিত করে মিটিং এ অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা রাখি।

বেহেশতে যাওয়ার জন্য এমন ভুল না করি যা হুতামায় নিক্ষিপ্ত হওয়ার পথ বাতলে দেয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post পশ্চিমা উসকানির কারণেই অভিযান: পুতিন
Next post জরুরি নয় এমন প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় সীমিত করল সরকার
Close