Read Time:11 Minute, 10 Second

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেয়ার বিরুদ্ধে সর্বসম্মতিক্রমে রায় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। সংসদ পুনর্বহালের পাশাপাশি শনিবার সংসদে ফের ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) এ রায় দিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। দিনভর নাটকীয়তা শেষে স্থানীয় সময় সাড়ে সাতটায় রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা এক ঘন্টা বিলম্বে ঘোষিত হয়। খবর ডনের

এদিকে এক সূত্রের বরাতে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রায়ের আগে ইমরান খান বলেছেন আদালতের রায় তিনি মেনে নেবেন।

অন্যদিকে ডনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ৩ এপ্রিল পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি তা বাতিল করে দেন। ডেপুটি স্পিকারের দেয়া ওই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা।

এর আগে মামলটির শুনানি চলাকালে দেশটির প্রধানবিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল মন্তব্য করেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।

এর মাধ্যমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ লঙ্ঘিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের বিষয় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) রুলের শুনানিতে এ মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধানবিচারপতি শুনানিকালে আরও বলেন, এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে এর পর কী করা উচিত। এখন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল (এজিপি) খালিদ জওয়াদ খান পরামর্শ দেবেন আদালত কোনো প্রক্রিয়ায় সামনে এগোবে। তবে প্রধান বিচারপতি সব দলের উদ্দেশে বলেন, আমাদের উচিত জাতীয় স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখা।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্ডিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চে চতুর্থ দিনের মতো মামলাটির শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি পাশাপাশি এই বেঞ্চে আর যে বিচারপতিরা আছেন তারা হলেন- ইজাজুল আহসান, মোহাম্মদ আলী মাজহার, মুনিব আখতার ও জামাল খান মান্দোখেল।

এদিন সকালে বিচারপতি আখতার ও বিচারপতি মান্দোখেল সুয়ো মোটো মামলাটির শুনানি শুরু করেন।

শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের রায়ে ডেপুটি স্পিকারে স্বাক্ষর নেই কেন? রায় দিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার কিন্তু স্বাক্ষর দেয়া স্পিকারের। এ ছাড়া ওইদিন সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন এই বিচারপতি।

বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল আরও প্রশ্ন করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কি উপস্থিত থাকা উচিত ছিল না? তার প্রশ্নের উত্তরে সরকারি আইনজীবী স্বীকার করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদে থাকা উচিত ছিল।

আগের দিন বুধবার শুনানিপর্বে পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবী আলী জাফর অনাস্থা ভোটের আগেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ ভাঙার দায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের কাঁধে চাপিয়েছেন। সেদিন বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল জানতে চান, কেন প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদ ভাঙার কারণ জানতে চাইলেন না প্রধানমন্ত্রীর কাছে? জবাবে জাফর বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ মানা প্রেসিডেন্টের কাছে বাধ্যতামূলক।

এর আগে পাকিস্তান পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি বৈঠকের অজুহাত দিয়ে জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক এড়িয়েছিলেন ইমরান। সরকারের প্রস্তাব মেনে গত ৩ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সংসদ মুলতবি ঘোষণা করেছিলেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট গত ৬ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির সেই বৈঠকের বিবরণলিপি তলব করে সরকারের কাছে।

গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী জোটের তরফে পেশ হওয়া অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটির কথা থাকলেও ডেপুটি স্পিকার সুরি তা খারিজ করে দেন। তার যুক্তি ছিল, বিদেশি শক্তির প্ররোচনায় আনা এই অনাস্থা প্রস্তাব আসলে সংবিধান-বিরোধী এবং তা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই এ নিয়ে কোনও ভোটাভুটি হতে দিতে পারবেন না তিনি। এর পরেই ইমরানের সুপারিশে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আলভি। তার প্রতিবাদে রাতেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা নেতৃত্ব। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে গত ৪ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট।

এর আগে গত ৮ই মার্চ ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকারের প্রতি লিখিত আবেদন জানায় তারা। ইমরান খান তখনো আত্মবিশ্বাসী, তিনি বিরোধীদের উল্টো এক হাত দেখে নেয়ার কথা জানান। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর স্পিকারকে ১৪ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় রাজধানী ইসলামাবাদে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দুইদিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকের জন্য সেই তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়।

এরপর ২৫শে মার্চ শুক্রবার আবারো অধিবেশন ডাকা হলেও সেদিন অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন ছাড়াই ২৮ তারিখ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার। ২৮ তারিখের অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ। সংবিধান অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের পর তিন দিন পার হলেই ভোটাভুটি করা যায়। তবে ভোটাভুটির জন্য সাত দিনের বেশি সময় নেয়া যাবে না। ২৮ তারিখ প্রস্তাব উত্থাপনের পর আবারো ৩১শে মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এরপর সর্বশেষ এ নিয়ে ৩রা এপ্রিল ভোটাভুটির তারিখ নির্ধারিত হয়।

অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রথম থেকেই ইমরান খানকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল বিরোধীরা। তাদের পক্ষে ছিল ১৬২ আইনপ্রণেতাও। যদিও ইমরানকে সরাতে প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোটের। তবে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর হঠাৎ করেই ইমরানের দল পিটিআই’র ২৪ এমপি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। তারা ইমরান খানের পক্ষত্যাগ করার ঘোষণা দেয়। এতে প্রচণ্ড চাপে পড়ে যান ইমরান। বিরোধীদের আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসে ইমরানের বিপদ তত বাড়তে থাকে। একদম শেষ মুহূর্তে সরকারি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট। তারা তাদের ৫ আসন নিয়ে বিরোধীদের দলে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যদিয়ে ইমরান খানের অনাস্থা ভোটে হারা সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ইয়েমেনে অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানাল বাংলাদেশ
Next post রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে দ্রুতই ফয়সালা হবে : আইনমন্ত্রী
Close