Read Time:6 Minute, 18 Second

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি মানা না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির সংসদ সদস্যরা। এ বিষয়ে সংসদকে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ সরকারের নেই। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে দিনের কার্যসূচি শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন।

সিরাজ বলেন, আমরা ছয়জন (বিএনপি দলীয়) এ সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, ‘এটা এ সংসদের জন্য অলংকার।’ আজকে তাই বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যিকার অর্থে অলংকার হয়ে থাকি, তাহলে এ সংসদ অলংকারবিহীন করবেন না। আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত এমনও হতে পারে, ম্যাডাম যদি চরম অবস্থায় চলে যায়, তাহলে আমাদের এই সংসদে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এটাকে শর্ত দিচ্ছি না। এ সময় তার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চাই, মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুয়েকদিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশে পাঠানো হোক। নচেৎ কিছু একটা হয়ে গেলে এর দায়ভার আওয়ামী লীগকে আজীবন বহন করতে হবে।

এ সময় সংসদে হইচই করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। বুধবার (১৭ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন তিনি। গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, জামিনের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ৪০১ ধারার দীর্ঘ বক্তব্য শুনেছি। গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম। যা সব দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। সিরাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন, রাগ বিরাগের বশবর্তী হবেন না। কিন্তু গতকাল (বুধবার) ওনার বক্তব্যের সঙ্গে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। এটা কি সঠিক না বেঠিক?

বুধবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য নির্বাহী ক্ষমতায় যা করার ছিল তা করেছি। বাকিটুকু আইনের ব্যাপার’। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে নিজের ওপর হামলা-ষড়যন্ত্রের ঘটনাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, এত বড় অমানবিক যে তাকেও আমরা মানবিকতা দেখিয়েছি। এ সময় দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কথাও সংসদকে জানান সিরাজ। বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, চিকিৎসার জন্য সংসদ নেতা বা আমরাও বিদেশে যাই। সেক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হবে না? এটা তার মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তাই হবে। তাই করেন। সব ক্ষমতার মালিক তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য বগুড়াসহ সারা দেশের মানুষ দোয়া করছেন। পোস্ট কোভিডের পরে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। যা তাকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নেত্রীর পরিবার থেকে পাঁচবার আবেদন করা হয়েছে। আমাদের দল থেকে বার বার আবেদন করা হচ্ছে। আমাদের আবেদন, অতি দ্রুত জামিন দিয়ে দুই-একদিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসা জন্য ম্যাডামকে পাঠানো হোক। এর আগে দলটির আরেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কিডনি, লিভার, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী অনেক মানবতা দেখিয়েছেন। আরেকটু মানবতা আমরা প্রত্যাশা করি।

পরে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আমি এটা নিয়ে পুনরায় কথা বলতে চাই না। আইন যা বলেছে সেই মতে, প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। ওনারা যদি দেখাতে পারেন। তাহলে আমরা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু ওনারা দেখাতে পারবেন না। আর বিবেচনার প্রশ্নও আসে না। তিনি বলেন, ওনারা বলেছেন, আ স ম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মান পাঠিয়েছিলেন। সেটা কোন ধারায় হয়েছে জানি না। তখন সামরিক আইন ছিল। সেই ধারা তো ফৌজদারি কার্যবিধির সঙ্গে চলে না। ওনারা যথেচ্ছা করেছেন। আজ আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমরা যথেচ্ছা করতে পারি না।

 

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post অল ইউরোপ বাংলা প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন
Next post গুলিতে নিহত মার্কিন র‍্যাপার ইয়ং ডলফ
Close