Read Time:6 Minute, 9 Second

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যে চীনা হস্তক্ষেপ আরও সীমিত করতে একটি দ্বিদলীয় আইন উত্থাপন করেছেন দুজন মার্কিন সিনেটর। মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে, এমন বিবেচনা থেকেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তারা। দ্য প্রোটেক্টিং সেনসেটিভ পার্সোনাল ডাটা অ্যাক্ট অব ২০২১ শীর্ষক এ আইনটি ফ্লোরিডায় রিপাবলিকান দলের সিনেটর ম্যাক্রো রোবিও এবং জর্জিয়ার ডেমোক্রেট সিনেটর রাফায়েল ওয়ারনকের পৃষ্ঠপোষকতায় আইনটি প্রণয়ন করা হয়।

কমিটি অন ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য ইউএস (সিএফআইইউএস) কর্তৃপক্ষের নজরদারি কার্যক্রম সম্প্রসারনের লক্ষ্য নিয়ে নতুন আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। সিএফআইইউএস একটি আন্তঃসংস্থা রেগুলটরি, যারা মার্কিন ব্যবসায়ের ক্রেতাদেরকে তাদের ক্রয়সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনার জন্য জমা দিতে বাধ্য করতে পারে।

সিনেটররা জানিয়েছেন, এই বিলটির মাধ্যমে জেনেটিক পরীক্ষার ফলাফল, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও বীমা আবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য সুরক্ষা চাওয়া যাবে। এ ছাড়া আর্থিক সঙ্কট, নিরাপত্তা, ভূতাত্তিক তথ্য, ব্যক্তিগত ই-মেইল, সরকারি শনাক্তকরণ তথ্য এবং ক্রেডিট প্রতিবেদনের মতো সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষার বিষয়ও থাকবে।

সিএফআইইউএসের পর্যালোচনাগুলোয় শুধুমাত্র চীনের অধিগ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়নি এবং আইনটিতে নির্দিষ্টভাবে চীনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। অবশ্য সিনেটর রুবিও নিজের ইচ্ছা প্রকাশে দ্বিধা বোধ করেননি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ব্যাক্তিগত তথ্য নিয়ে কাজ করে এমন মার্কিন কোম্পানিগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ বিষয়ে আমেরিকানদের গভীরভাবেই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। কারণ এ ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জেনেটিক পরীক্ষার ফলাফল এবং ব্যাক্তিগত অর্থনৈতিক লেনদেনের মতো তথ্যগুলো চীনসহ বিভিন্ন স্থানে ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

এ প্রসঙ্গে সিনেটর ওয়ারনক বলেছেন, ‘ক্ষতি করতে চায় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে’ ব্যাক্তিগত উপাত্ত এবং তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের মতো একটি আইনি কাঠামো ব্যবহার করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মতো দেশগুলো আমেরিকানদের ব্যাক্তিগত তথ্যগুলো নিজেদের কাজে ব্যবহার করে। এটি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি।’

আশা করা হচ্ছে দ্বিদলীয় বিলটি কংগ্রেসে শক্ত সমর্থন পাবে। কারণ বিশ্বের সব দেশই এখন ব্যাক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য নিজস্ব আইন প্রনয়ণের দৌড়ে রয়েছে। গত সোমবার চীনে প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে সমন্বিত আইন ‘পার্সোনাল ইনফরমেশন প্রোটেকশন ল’ কার্যকর হয়। চীনের এই আইনটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) জেনারেল ডাটা প্রোটেকশন রেগুলেশন অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের উপাত্ত সংগ্রহে থাকে এমন স্থানীয় ও কিছু বিদেশি কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে এ আইন তৈরি করা হয়েছে।

কিছু কিছু মার্কিন আইনপ্রনেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, তথ্য সুরক্ষার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে রয়েছে; যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত নের্তৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। শুধু তাই নয় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বিদেশি সরকারের হাতে চলে গেলে ভয়াবহ নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় সম্প্রতি পর্যালোচনা বাড়িয়ে দিয়েছে সিএফআইইউএস। যেমন, ২০১৯ সালে বেইজিং কুনলন টেককে গ্রিন্ডারে বিনিয়োগ তুলে নিতে বলে। গে ডেটিং অ্যাপ গ্রিন্ডার ২৪৫ ডলারে কিনেছিলৈা চীনের কোম্পানিটি। কিন্তু এই অ্যাপটির গ্রাহকদের বিভিন্ন ব্যাক্তিগত তথ্য এবং এইচআইভি সংক্রান্ত তথ্যগুলো চীনের হাতে চলে যাবে ও সাইটটি ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই চুক্তিটির বিপক্ষে মত দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সাম্প্রতি উত্থাপিত আইনটির মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, অন্তত কংগ্রেসের কিছু সদস্য বোঝতে পেরেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি আরও নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে রওশন এরশাদ
Next post ফাইজারের করোনার পিল মৃত্যু ঝুঁকি কমায় ৮৯ শতাংশ
Close