Read Time:8 Minute, 16 Second

ভ্রমণ ভিসায় প্রথমে নেওয়া হতো দুবাই। এরপর কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। সেখানে তারা কাজের অনুমতি পেলেও অনেকেই কাজ পেতেন না। এতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হতো তাদের। এভাবে গত সাত বছরে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পাচার করে একটি চক্র। সেই চক্রের মূল হোতা নাইম খান ওরফে লোটাস। রাজধানী অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় অভিযান চালিয়ে চক্রের আরও সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- নুরে আলম শাহরিয়ার, রিমন সরকার, গোলাম মোস্তফা সুমন, বদরুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, মো. সোহেল ও মো. হাবিব।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ১৪টি নকল বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) কার্ড, একটি সিপিইউ, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, দুই বক্স খালি কার্ড, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি চেক বই, পাঁচটি নকল সিল জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ভুক্তভোগীরা র‌্যাব-৩-এ অভিযোগ করেন যে, একটি চক্র তাদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশ যেতে চাননি এবং টাকা ফেরত চান। তখন মানব পাচারকারী চক্রটি নকল বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড তৈরি করে ভিকটিমদের দেয়। নকল কার্ড নিয়ে ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন করতে গেলে বিমানবন্দরের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সদস্যরা ভিকটিমদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড নকল হিসেবে শনাক্ত করেন এবং তাদের বিদেশ যাত্রা স্থগিত করেন। তখন ভিকটিমরা তাদের সংশ্লিষ্ট দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

লে. কর্নেল রকিবুল হাসান আরও বলেন, ভিকটিমের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর দল গোপন সংবাদের মাধ্যমে তুরাগ, উত্তরা, রমনা, পল্টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। নাইম খান ওরফে লোটাস চক্রের হোতা। তিনি দুবাই প্রবাসী। চলতি বছরের মে মাসে তিনি দেশে আসেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তিনি ২০১২ সালে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে দুবাই যান। পরবর্তী সময়ে দুবাই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সেখানে শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ ভিসায় দুবাই অবস্থানকারীদের ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজের বৈধতা দেয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নাইম মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েন।

তিনি দুবাইয়ে এবং বাংলাদেশে তার পরিচিতজনদের মাধ্যমে ভিকটিমদের উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দুবাই যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করেন। ভিকটিম রাজি হলে দুই থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি তাদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই নিয়ে থাকেন। ভিকটিমরা ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ার পর কেউ কেউ কাজের সুযোগ পেলেও অধিকাংশই কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এভাবে তিনি সাত বছর ধরে পাঁচ শতাধিক ভিকটিমকে দুবাই পাচার করেছেন।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মানবপাচার থেকে অবৈধ উপার্জন দিয়ে নাইম দুবাইয়ে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রেসিডেন্স ভিসার অনুমোদন নেন। নাইমকে তার সহযোগীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, দুবাইয়ে ফারুক নামে তার একজন সহকারী রয়েছেন এবং গ্রেপ্তারকৃত নুরে আলম শাহরিয়ার বাংলাদেশে তার মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্রের হোতা হাবিব ও খোরশেদ। তারা দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত গোপনে নিজেদের আড়ালে রেখে বিশ্বস্তজনের মাধ্যমে ভিকটিমদের নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে আসছেন।

 

লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নাইম বিএমইটি কার্ড ছাড়াই মানবপাচার করে আসছেন। ভিকটিমরা বিএমইটি কার্ড দাবি করলে শাহরিয়ার তার চাচা গ্রেপ্তারকৃত গোলাম মোস্তফা সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন সুমন জানান, ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি একটি বিএমইটি কার্ড দিতে পারবেন। নাইম ভিকটিমদের বিএমইটি কার্ড সংগ্রহ করার জন্য শাহরিয়ারের মাধ্যমে ১৩টি পাসপোর্ট সুমনের কাছে হস্তান্তর করেন। আর সুমন সাত হাজার টাকার বিনিময়ে একটি বিএমইটি কার্ড হিসেবে পাসপোর্ট বদরুলের কাছে হস্তান্তর করেন। বদরুল এক হাজার টাকার বিনিময়ে একটি বিএমইটি কার্ড হিসেবে পাসপোর্ট খোরশেদের কাছে হস্তান্তর করেন। খোরশেদ ৬৫০ টাকার বিনিময়ে একটি বিএমইটি কার্ড হিসেবে পাসপোর্ট হাবিবের কাছে হস্তান্তর করেন। হাবীব পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে জাল বিএমইটি কার্ড তৈরি করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, এরপর জাল বিএমইটি কার্ড খোরশেদ ও বদরুলের হাত হয়ে সুমনের কাছে পৌঁছায়। রিমন সরকার শাহরিয়ারের নির্দেশে জাল বিএমইটি কার্ড সুমনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নাইমের কাছে পৌঁছে দেন। নাইম ফ্লাইটের আগে ভিকটিমদের কাছে জাল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করেন। সোহেল স্থানীয় দালাল হিসেবে কাজ করেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ‘মানুষ গভীর সংকটে, দেশে ভয়ানক দুঃসময়’
Next post বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির আইসিএওতে পরিচয়পত্র পেশ
Close