Read Time:7 Minute, 57 Second

কাজী মশহুরুল হুদা :

বালা অর্থাৎ বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব লস এঞ্জেলেস নিয়ে আমার একটু মাথা ব্যথা আছে। মাথার উপর বালার একটা কেস মাথায় নিয়েই প্রতিবেদনটি লিখছি। আমি যখন আশিরদশকে লস এঞ্জেলেসে আসি তখন এই সংগঠন প্রবাসী বাংলাদেশীদের একমাত্র সংগঠন ছিল এবং সেই সংগঠন প্রফেশনাল বুদ্ধিজীবীদের কুক্ষিগত ছিল। সেখান থেকে মরহুম শহিদুল্লাহ খানের হাত ধরে সাধারণ কমিউনিটির হাতে চলে আসে। সে এক বিশাল কাহিনী। আমি সেই কাহিনীর বর্ণনা দিচ্ছি না।

এরপর বালার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং মামলার ফলে কোর্টকাচারির পর্যায়ে যায় কমিউনিটি। ২০ বছর যাবত কোর্টের কড়িডোরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে বালা।

বিশ বছর পর আমি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দদেরকে সংগঠিত করে বালাকে আবারও উজ্জিবিত করার চেষ্টা চালাই। এবার নির্বাচনকে ঘিরে জনৈক ব্যাক্তি ৮ বছর বালাকে তথাকথিত সভাপতি হিসেবে পকেটে বন্দি করে রাখে এবং নিজেকে বালার প্রেসিডেন্ট ভেবে বসে থাকে ( এ’যেন ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার)। এরপর বালার রেজিষ্ট্রেশন চলে যায় অন্যের হাতে এবং নিধিরামের হাত থেকে চলে যায় পকেটস্থ বালা। বাবাকে তার আদর্শিক কর্ম ব্যাবস্হায় ফিরিয়ে আনার জন্য এই শহরের শিক্ষিত মুরব্বিজনের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়।তার নামে রেজিষ্ট্রেশন দিয়ে বলা হয় বালার সংবিধান অনুযায়ী একটা নির্বাচনের মাধ্যেমে বালাকে চালু করা।

তিনি নিজের নামে রেজিষ্ট্রেশন করে বালার একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন যা মূল বালার সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। ঘরোয়াভাবে নির্বাচন হয় এবং একটি পুতুল কমিটির মাধ্যমে বেশ কয়েক বছর চলতে থাকে। আবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বালা ব্যাক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। বালাকে কেন্দ্র করে আবারও কোর্টে কেস হয়। কয়েকজনের নামে মামলা শুরু হয়। তারমধ্যে আমিও একজন (বালার কেস চলমান), এই বালার জন্য আদালতের বারান্দায় দৌঁড়াদৌঁড়ি হচ্ছে। এই লেখার সময়ও আমার ঘাড়ে বালার পক্ষ থেকে মানহানির মামলা চলছে।

কয়েকদিন আগে হটাত একটি নোটিশ চোখে পড়ে, বালার টাউন হল মিটিং। খোঁজ নিয়ে জানাগেল বর্তমান প্রেসিডেন্ট বালার টাউন হল মিটিং ডেকেছে এবং কারণ হিসেবে যে সকল কথা তিনি বলেছেন তা আবার নতুন বালার সংবিধান অনুযায়ী সাংঘর্ষিক (যদিও মূল সংবিধানের সাথে মিল রয়েছে)।

অপরদিকে আরও একটি নোটিশ দেখলাম, যেখানে বলা হয়েছে কে বা কারা বালার নামে টাউন হল মিটিং ডেকেছে তাদের সাথে বালার কোন সম্পর্ক নেই। বালার বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্য আরেকজনার নাম। বিষয়টা গভীরভাবে জানার জন্য টাউন হল মিটিং ডাকা প্রেসিডেন্টকে কল করে বিষয়টা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট (নতুন প্রক্রিয়ায়) কিন্তু তাকে কোন রকম নোটিশ না দিয়ে নিজেরা নিজেরা মিটিং করে একই দিনে প্রেসিডেন্ট বাতিল করে, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে এবং নির্বাচন কমিশনার ব্যাতিরেকে জনৈক ব্যাক্তির দ্বারা শপথ পড়িয়ে তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়। এযেন ৭৫ এর ঘটনার মত। এমন করার পিছনে কি কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে জানা যায় যে, ফোবানার নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই এর সূত্রপাত।
পরবর্তীতে টাউন হল মিটিং হয়নি। অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে গেছে। ঘটনাকে শুরু থেকে টেনে বলার উদ্দেশ্য হল- গবেষণা করলে দেখা যাবে, বালা সৃষ্টি হয়েছিল কমিউনিটির মানুষের কল্যাণে। সেই উদ্দেশ্য ও আদর্শ কখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবর্তে বালাকে কেন্দ্র করে বা ব্যবহার করে সকলেই ব্যাক্তিস্বার্থকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য চরিত্রহীন হয়ে পড়েছে সকলেই কিন্তু কমিউনিটির উপকারে আসেনি। আজ পর্যন্ত বা কমিউনিটির জন্য কল্যাণকর কিছু করতে সক্ষম হয়নি কেউ। যেটা হয়েছে তা হল- মারামারি, হানাহানি, শত্রুতা ও কমিউনিটির অমঙ্গল।

অথচ আদর্শিকভাবে অন্যান্য কমিউনিটির মত শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সহ টেকনোক্রাফটে কমিউনিটির কল্যাণে প্রতিষ্ঠানিক প্রকল্প প্রণয়ন করা যেত। আজ লস এঞ্জেলেসের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশী সংস্কৃতি থেকে বহুদূরে এখানে কোন বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। গানে বা নৃত্যের কোন স্কুল তৈরি হয়নি। বাংলা পত্রিকা ধরে রাখা যায়নি। কোন বুকস্টল নেই যা নতুন প্রজন্মকে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করবে। বর্তমানে যা আছে তা হল দেশীয় রাজনৈতিক কোন্দল, বাইরে থেকে শিল্পীভাড়া করে এনে অনুষ্ঠান করা। লস এঞ্জেলেসে দেশীয় সংস্কৃতির বড়ই অভাব আছে।

বালাকে যদি ঐক্যমতের ভিত্তিতে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে আদর্শিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তবে কমিউনিটির প্রজন্ম শেকড়ের সন্ধান পাবে।
আরও একটি বিষয়, বালাকে একটি স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে মাথা তুলে কাজ করতে হবে। বাংলা কোন ফেডারেশনের সাথে সংযুক্ত বা সম্পৃক্ততা থাকতে পারবেনা। এমনকি ফোবানা বা বাফলা কোনটার সাথেই না। বালাকে ফেডারেশন মুক্ত রাখতে পারলে ব্যাক্তি স্বার্থ উদ্ধারের সেতু থাকবে না। ফলে আদর্শচ্যুত হওয়ার কোন দিক নির্দেশনা সৃষ্টি হবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমার বিশ্বাস এক দিন শনির দশা মুক্ত হয়ে সকলের আশা পূর্ণ হবে ( ইনশাল্লাহ )।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সুস্থ হয়ে উঠছেন খালেদা জিয়া: চিকিৎসক
Next post সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, ক্যালিফোর্নিয়া
Close