গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেখে ভাবনাটা মাথায় আসে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইংরেজিতে লেখা বিশ্বমানের বইয়ের খুব অভাব। নিউক্যাসেলে আমার প্রতিবেশী এক অস্ট্রেলিয়ান ঢাকায় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াতেন। ঢাকায় তিনি ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমাদের দেশে এত বড় একজন নেতা ছিলেন, আমরা কেন তা জানতে পারি নি’। দুটো ঘটনায় আমার মনে হলো, কেন আমি চেষ্টা করে দেখি না?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের সাথে আমার রয়েছে পয়ত্রিশ বছরের অধিক সম্পৃক্ততা। তা ছাড়া বিদেশে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করার সুবাদে ইংরেজিতে প্রচুর লেখালেখি করতে হয়েছে। এই দুয়ের সুবাদে মনে হলো, শুরু করা যাক। আমার কাছে বিভিন্ন দেশের কালজয়ী নেতাদের বিখ্যাত ভাষণের একটা বই আছে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটিও আছে। তাই ভাবলাম, বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলোকেই ইংরেজি অনুবাদ দিয়ে শুরু করি না কেন? শুরুতেই সমস্যা ছিল, আমার কাছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কোন বই নাই। ঢাকায় রুদ্র সাইফুলকে বলতেই তার কাছে সংরক্ষিত কিছু ভাষণের সফট কপি পাঠিয়ে দিল। এ বছরের চৌদ্দ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করলাম। চার-পাঁচটি ভাষণ অনুবাদ করার পরে মনে হলো, এই মুহূর্তে সব ভাষণ অনুবাদ না করে বরং নির্বাচিত কিছু ভাষণ অনুবাদ করি।
এই গ্রন্থে আমি ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত পঁচিশটি ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করেছি। যার মধ্যে ১৯৫৬ সালের দুটি ভাষণ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সংসদে ইংরেজিতে দিয়েছিলেন। বাকি তেইশটি ভাষণ আমি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছি। বইয়ের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী অন্তর্ভুক্ত করেছি। সব মিলিয়ে, এই বইটি পাঠ করে একজন ভিনদেশী পাঠক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সম্পূর্ণ রূপে আবিষ্কার করতে পারবেন।
বইয়ের কাজটি করতে গিয়ে আমি পরিচিত-অপরিচিত অসংখ্য মানুষের সহায়তা পেয়েছি। রুদ্র সাইফুল প্রেরিত ভাষণগুলো ছাড়াও আমাকে রংপুর থেকে আরও ভাষণ পাঠিয়েছেন ডা. আফতাব সিদ্দিক। প্রয়োজন হলেই বিভিন্ন ভাষণ কম্পোজ করে পাঠিয়েছেন অন্বেষা প্রকাশনের সত্বাধিকারী মো. শাহাদাত হোসেন। আর প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন ডা. আব্দুন নূর তুষার। অস্ট্রেলিয়ায় আমার সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সহযোগীরাও খুব উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে নোমান শামীম, শফিকুল আলম ও গামা কাদির ভাইয়ের নাম উল্লেখ করতেই হয়। আমি সবার নাম বইয়ের ‘কৃতজ্ঞতা স্বীকার’ অংশে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। ঢাকা থেকে নানানভাবে আরো সাহায্য করেছে বন্ধু কাজি আহমেদ পারভেজ, ইকরাম কবির, আওসাফুর রহমান, তারিক সুজাত, শেখ ফারুক আহমাদসহ আরো অনেকে।
বইটির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। বইটির ইংরেজি ভাষার সম্পাদনা করেছেন নিউজিল্যান্ডবাসী পল মেহু। পল মূলত মেডিক্যাল লিটারেচার সম্পাদনা করেন। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা আমাকে যুগপত বিস্মিত এবং মুগ্ধ করেছে।
বইটি প্রকাশের কথা জেনে বাংলাদেশ হাইকমিশন অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান আমাকে নানানভাবে সাহায্য করেছেন। বইটি প্রকাশে আমার বাল্যবন্ধু মো. সাইফুল আলম যেভাবে সহায়তা প্রদান করেছে, তা ভাষায় প্রকাশে আমি অক্ষম। করোনার এই প্রতিকূল সময়ে সে বইয়ের প্রচ্ছদ ও পাণ্ডুলিপি একাধিকবার বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌছে দিয়েছে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বইয়ের পাণ্ডিলিপিটি মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন এবং তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেছেন। আমি বিদেশী শিল্পীদের দিয়ে বইটির তিনটি প্রচ্ছদ করে পাঠিয়েছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার মধ্য থেকে একটি প্রচ্ছদ চূড়ান্ত করে দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক বইয়ের পাণ্ডুলিপিটি আমি বিশিষ্ট সাংবাদিক নাদিম কাদির ভাইকে দেখিয়ে নিয়েছি। সর্বোপরি, বইটির জন্য একটি ভূমিকা লিখে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন।
বইটি আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে উৎসর্গ করেছি। বইটি প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা হে পাব্লিশিং হাউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বালবোয়া প্রেস অস্ট্রেলিয়া। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আমেরিকার ফ্লোরিডা নিবাসী এনজি অ্যালিয়া। গত বারোই অক্টোবর প্রকাশিত গ্রন্থটি এখন অ্যামাজন, বুকটোপিয়াসহ বিশ্বের উল্লেখযোগ্য অনলাইন বুকস্টোরসমূহে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বইটির ই-বুক, পেপারব্যাক ও হার্ডকাভার সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে। অচিরেই বাংলাদেশেও অন্বেষা প্রকাশনের মাধ্যমে বইটি পরিবেশন করা হবে। বইটির পেপারব্যাক সংস্করণের দাম পড়বে ২২০০ টাকা, হার্ড কাভার সংস্করণ চারহাজার টাকা।
আগামী ছয় নভেম্বর সিডনিতে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। প্রকাশনা উৎসবে অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, লেখক ও বাঙালি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
আমি চাই বইটি পৃথিবীর আগ্রহী পাঠকের কাছে পৌছে যাক। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশের বিভিন্ন বাংলাদেশী মিশনের মাধ্যমেও বইটির ব্যাপক প্রচার করতে পারে। পর্যাপ্ত সহায়তা পেলে ভবিষ্যতেও বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে ইংরেজি ভাষায় আমার আরো কিছু কাজ করবার ইচ্ছে আছে।
বইয়ের ভাষণগুলো অনুবাদ করেছেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কবি এবং চিকিৎসক ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন।
More Stories
৫ বাংলাদেশিসহ ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র
ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে মিছিল করার অপরাধে পাঁচ বাংলাদেশিসহ চার শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।...
লস এঞ্জেলেসে লিটিল বাংলাদেশ কমিউনিটির চাঁদরাত মেলা যেমন ছিল
শামসুল আরিফীন বাবলু রোজা শেষে ঈদ’কে স্বাগত জানাতে লস এঞ্জেলেসে লিটিল বাংলাদেশ কমিউনিটির উদ্যোগে চাঁদরাত উপলক্ষ্যে এক ঈদ মেলার আয়োজন...
সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে এক মাসে এতো রেমিট্যান্স এসেছে
সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক মাসে রেমিট্যান্স এসেছে। গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে তিন বিলিয়ন (৩০০ কোটি)...
মিয়ানমারে বাংলাদেশি নাগরিকরা নিরাপদ রয়েছেন : রাষ্ট্রদূত
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা নিরাপদ রয়েছেন। শুক্রবার (২৮ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ...
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র ইফতার
শামসুল আরিফীন বাবলু, প্রবাস বাংলা ডেস্ক যুক্তরাস্ট্রে বসবাসরত বৃহত্তর সিলেটিদের সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব ক্যালিফোর্নিয়া’র আয়োজনে ইফতার ও দোয়া মাহফিল...
ক্রিকেটার সেজে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা, আটক ১৫ বাংলাদেশি
ক্রিকেটার সেজে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টাকালে ১৫ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (১৭ মার্চ) তাদের আটক...