Read Time:5 Minute, 30 Second

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহিদ টোপন (৫৯) নামে এক বাংলাদেশি প্রবাসীর এক বছর একদিনের কারাদণ্ড হয়েছে। নিউজার্সির ফেডারেল কোর্টের জজ পিটার শেরিড্যান এই রায় প্রদান করেছেন। কারাবাসের পর আরও দুই বছর টোপনকে কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে অতিবাহিত (সুপারভাইসড রিলিজ) করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রায় অনুযায়ী, সিলেটের সন্তান টোপনকে সোয়া তিন লাখ ডলারের মত অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে। এই অর্থ তিনি ট্যাক্স এবং অন্যভাবে ফাঁকি দেন বলে আদালতে তিনি স্বীকার করেছেন।

একই মামলার অপর অভিযুক্ত ময়মনসিংহের ইকবাল কবির (৪৭)-কে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মুক্তির পর তাকেও বিশেষ নজরদারিতে থাকতে হবে টানা দুই বছর। আইআরএস (ট্যাক্স) এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে দোষ স্বীকার এবং জীবনে আর কখনো এমন জঘন্য অন্যায় না করার মুচলেকার ভিত্তিতে আদালত ইকবাল কবিরকে লঘু দণ্ড দেন বলেও ফেডারেল প্রসিকিউটররা উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, হালাল চিকেন ফার্মের ব্যবসা করতেন নিউইয়র্কের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহিদ টোপন। এস্টোরিয়া এবং নিউজার্সিতে তার হালাল চিকেন এর খামার রয়েছে টার। মামলায় জানা গেছে, চিকেন জবাই করে বিক্রির খামারে নিয়োজিত কর্মচারীরা ন্যায্য পারিশ্রমিক পাননি। এছাড়াও কর্মচারীদেরকে নিউইয়র্ক থেকে নিউজার্সির মিডলসেক্স কাউন্টিতে নিয়ে খামারের প্রায় ভেতরেই অসহনীয় দুর্গন্ধে রাত কাটাতে বাধ্য করা হতো। ন্যায্য পারিশ্রমিক দাবি করলেই কর্মচারীদেরকে ইমিগ্রেশনের হাতে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হতো। অর্থাৎ টোপন বাংলাদেশি ঐ শ্রমিকদেরকে জিম্মি করে কাজ করিয়েছেন বছরের পর বছর। তদন্তে এসব প্রমাণিত হবার পরই টোপন ও তার সহযোগী কবিরকে ২০১৬ সালে গ্রেফতার করা হয় নিউজার্সির হালাল চিকেন খামার থেকে।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত টোপন ও কবির তার কর্মচারীদেরকে সপ্তাহে ২৯০ ডলার করে দিতেন। কাজ করতে হয় ৭০ ঘন্টা থেকে ১০০ ঘন্টা করে। অতিরিক্ত সময় কাজের বিনিময়ে ওভারটাইমের বালাই ছিল না। অধিকন্তু ৪০ ডলার করে কেটে রাখা হয় মুরগীর খামার সংলগ্ন একটি ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাত কাটানোর জন্যে। মামলার শুনানীর সময় আইনজীবীরা আদালতকে অবহিত করেন যে, কর্মচারীরা ন্যায্য পারিশ্রমিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রাত্রি যাপনের দাবি জানালেই হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছে সোপর্দ করার হুমকি দেয় আব্দুল ওয়াহিদ টোপন।

জামিনে মুক্তি লাভের পর গত বছরের জানুয়ারিতে আব্দুল ওয়াহিদ টোপন দোষ স্বীকার করেছেন ট্যাক্স রিটার্নে জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার। এমনকি কর্মচারীদের বেতনের বিপরীতেও ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন বছরের পর বছর। কবির দোষ স্বীকার করেছেন আর্থিক সুবিধার জন্যে নিউইয়র্ক থেকে কর্মচারীদেরকে নিউজার্সিতে পাচারের জন্যে।

জানা যায়, যে দুই বাংলাদেশি কর্মচারীকে ঠকিয়েছেন তাদেরকে ৫০ হাজার ডলার করে প্রদানের জন্যে টোপন তার এস্টোরিয়াস্থ ৪৪-১৭ ২৫ এভিনিউতে অবস্থিত বাড়িটি বিক্রি করেছেন। এ চুক্তি হয় ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর। নিউইয়র্কে বিশেষ আলোচিত আব্দুল ওয়াহিদ টোপন নিজেকে সমাজকর্মী এবং কখনো কখনো দানবীর হিসেবেও পরিচিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন নিয়ে ভোজনের আয়োজন ছাড়াও বিশিষ্টজনদের ক্রেস্ট প্রদানের ঘটনাও ঘটিয়েছেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post জিয়ার মরণোত্তর বিচার কার্যকর করবই: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
Next post ‘নির্ধারিত সময়সীমার পরও আফগানিস্তানে থাকতে পারে মার্কিন সেনা’
Close