Read Time:9 Minute, 22 Second

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন এবং বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেল ৮ আগস্ট যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে পরিবার, দেশ এবং জাতির জন্য বঙ্গমাতার আত্মত্যাগ স্মরণ করে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার মেহেদী হাসান এবং প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম মঈনুল হাসান।

রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে নিজ পরিবারের প্রতি বঙ্গমাতার অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধুর জীবনে তাঁর প্রভাব এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণে পর্দার অন্তরালে থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত সহিদুল ইসলাম বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বঙ্গবন্ধুর কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বঙ্গমাতা যেভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে এই মহিয়সী নারীর জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নারকীয় হামলায় শহীদ হওয়া সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে একটি বিশেষ প্রার্থনা পরিচালিত হয়।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয় কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে সামাজিক দূরত্ব মেনে। এ অনুষ্ঠানে মিশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি অংশগ্রহণ করেন। শুরুতেই জাতির পিতা ও বঙ্গমাতাসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় অনুষ্ঠানের এ পর্বে।

আলোচনা পর্বে মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উদযাপনকে জীবন ও কর্ম এবং দেশ ও জাতিগঠনে তাঁর অসমান্য অবদানের নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। দিবসটির প্রতিপাদ্য – “বঙ্গমাতা- সংকটে সংগ্রামে নির্ভিক সহযাত্রী” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেছে এই প্রতিপাদ্যে। জাতির পিতার দীর্ঘ গৌরবময় সংগ্রামে, সকল সঙ্কটে অকুতোভয়, নির্ভিক সহযাত্রী ছিলেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। সঙ্কটময় রাজনৈতিক জীবন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও তিনি সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে শক্তি যুগিয়েছেন। তাই বঙ্গমাতার জীবনাদর্শ ও মুল্যবোধ হোক সকল নারীর অনুকরণীয় আদর্শ”।

বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৫ জন বিশিষ্ট নারীকে ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ প্রদান করাকে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। আলোচনা পর্ব শেষে বঙ্গমাতাকে নিয়ে কবিতা পাঠ করেন মিশনের কর্মকর্তাগণ।

এদিকে, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর প্রথমবারের মত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী “ক” শ্রেণীভূক্ত জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং কনস্যুলেটের কর্মকর্তাবৃন্দ। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী’র বাণী পাঠ করা হয়। জাতিরপিতা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য শহিদ সদস্যসহ সকল শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদেও আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয় এবং তাঁদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব এর উপর নির্মিত একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

কনসাল জেনারেল তাঁর বক্তব্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ সদস্যদের হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের রায় কার্যকরে সচেষ্ট ভূমিকা রাখার জন্য তিনি সকলকে পুনরায় অনুরোধ জানান।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবন সম্বন্ধে আলোকপাত করতে গিয়ে কনসাল জেনারেল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব এর অবদান অপরিসীম। দেশ ও জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে ’বঙ্গমাতা’-তে অভিষিক্ত করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বনেতা হওয়ার নেপথ্যে তাঁর নিরবিচ্ছিন্ন অনুপ্রেরণা এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গমাতা এক অন্যতম নির্ভীক সৈনিক। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব’কে কনসাল জেনারেল ‘রত্নগর্ভা’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন যে তিনি শত প্রতিকূলতার মাঝেও তাঁর সন্তানদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন এবং তাঁরই জন্য আজ আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত বিচক্ষণ, দূরদর্শী এবং মমতাময়ী একজন মহান নেতার নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নির্ভিক, সংগ্রামী, ত্যাগী ও সংযমী জীবনাদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য সকলকে আহবান জানান।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপন
Next post মাল্টায় বাংলাদেশি যুবক গ্রেপ্তার
Close