Read Time:7 Minute, 13 Second

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিম ও কানাডার পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ তাপপ্রবাহ এরই মধ্যে ৬ শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আক্রান্ত এলাকার গভর্নরদের সাথে ভার্চুয়াল সংলাপে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বুধবার উল্লেখ করেছেন, এহেন পরিস্থিতির ভিকটিম হচ্ছি আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঢেউ অব্যাহত থাকায়। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বহমান এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির ভিকটিম হয়েছেন তিন কোটিরও অধিক মানুষ। এরমধ্যে ১০ লাখের মত প্রবাসীও আছেন। কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ সকলকে স্বাস্থ্য-সচেতনতা অব্যাহত রেখে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন। বাসার এয়ারকন্ডিশন হিসাব করে চালাতে বলেছেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার আহবানও জানানো হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন থেকে।

নজীরবিহীন এ দাবদাহে চলতি সপ্তাহেই কানাডার শীতপ্রধান ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার একটি শহরের তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভেঙে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল বলে সেখানকার আবহাওয়াবিদরা উল্লেখ করেন। এর আগে কানাডার তাপমাত্রা কখনোই ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠেনি। তাপদাহ অব্যাহত থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখন সামনের কয়েকদিনের তীব্র গরম ও দাবানলের ঝুঁকি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসন থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ করোনা মহামারি থেকে জেগে উঠার সময়ে প্রকৃতির বৈরী এ আচরণে নতুন এক ভীতির মধ্যে নিপতিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিরাট একটি জনপদের মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনে গরমের তীব্রতা বুধবার থেকে কমে এলেও এরই মধ্যে এ স্টেটে তাপপ্রবাহজনিত কারণে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বুধবার রাতে জানান।

পোর্টল্যান্ড যে কাউন্টির অন্তর্ভুক্ত, সেই মাল্টনোমা শুক্রবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের মৃত্যুর জন্য প্রাথমিকভাবে হাইপারথারমিয়াকে (হাইপোথারমিয়ার বিপরীত দশা) দায়ী করেছেন কাউন্টিটির ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।

তাকে উদ্ধৃত করে দেওয়া সরকারি এক বিবৃতিতে পরিস্থিতির তুলনা করতে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওরেগনে হাইপারথারমিয়ায় মাত্র ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলেও জানানো হয়।

গত ৬ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এ স্টেটের হাসপাতালগুলোতে গরমজনিত অসুস্থতা নিয়ে আসা রোগীর চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ওরেগনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় ৬ দিনে ৪৮৬টি হঠাৎ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এই সংখ্যা প্রদেশটিতে সাধারণত এই সময়ে স্বাভাবিক মোট মৃত্যুর প্রায় তিনগুণ বলে বুধবার জানিয়েছে সেখানকার ময়নাতদন্তকারী বিভাগ।

“এটা প্রকৃতই স্বাস্থ্য সংকট, যা দেখাচ্ছে, তীব্র তাপপ্রবাহ কতটা প্রাণঘাতী হতে পারে। আমাদের গ্রীষ্মগুলো এখন ক্রমাগত উষ্ণ হচ্ছে, আমার আশঙ্কা আমরা ফের এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হবো,” বিবৃতিতে বলেছেন কানাডার মাল্টনোমা কাউন্টির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. জেনিফার ভাইনস।
কয়েকদিনের মধ্যে এ তাপপ্রবাহ পূর্ব দিকে সরে যেতে পারে বলে ধারণা করা হলেও, আবহাওয়ার যে পরিস্থিতি তাতে অ্যালবার্টা থেকে ম্যানিটোবার বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কানাডার সরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জের জ্যেষ্ঠ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ডেভিড ফিলিপস।

“কিছু কিছু এলাকায়, এ তাপপ্রবাহ সেখানকার আগের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গুড়িয়ে দেবে। এটা মারাত্মক, আগে কখনোই এমনটা দেখিনি আমরা,” বলেছেন তিনি। আবহাওয়ার এ রূদ্রমূর্তির কারণ কী, তা অস্পষ্ট হলেও তাপপ্রবাহের এমন স্থায়িত্ব ও তীব্রতা দেখে এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা আছে বলেই মনে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অটোয়াতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাপপ্রবাহে নিহতদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন। তিনি সামনের দিনগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
“গত কয়েক বছর ধরে আমরা আবহাওয়ার এমন রূদ্রমূর্তি বারবার দেখে আসছি। এবারেরটাই যে শেষ তাপপ্রবাহ নয়, তাও আমরা জানি,” বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে পশ্চিমাঞ্চলীয় স্টেটগুলোর গভর্নরদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনই ‘তীব্র তাপ ও দীর্ঘস্থায়ী খরার এমন বিপজ্জনক সংমিশ্রনের’ দিকে ধাবিত করছে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র রেকর্ড সংখ্যক দাবানল দেখতে পারে জানিয়ে, তা মোকাবেলার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে আছে বলেও সতর্ক করেছেন জো বাইডেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post কেন পশ্চিমতীর থেকে ইহুদি বসতি সরাচ্ছে ইসরায়েল?
Next post বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-এর কোরিয়ান সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন
Close