মধ্যপ্রাচ্যের নির্যাতিত রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে জায়গা দখল করে একের পর এক ইহুদি বসতি গড়ে তুলেছে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল। যদিও গড়ে তোলা সেসব ইহুদি বসতি থেকে একাধিক ইহুদি পরিবারকে এবার সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল সরকার।
তবে ইহুদি পরিবারগুলোকে জায়গাটি ছেড়ে দিতে বলা হলেও সেটা ফিলিস্তিনিদের হাতে তুলে দেবে না ইসরায়েল। ওই জায়গায় নতুন সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। অবশ্য ফিলিস্তিনিদের বক্তব্য, ওই জমি তাদের। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বদলে তাদের ওই জমি প্রাপ্য ছিল।
জার্মান মিডিয়া ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, সম্প্রতি বেশকিছু ইহুদি পরিবার ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের নতুন একটি জমি দখল করে বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের আশ্রয় গড়ে তুলছিল। ধীরে ধীরে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছিল ভবনও। তবে কাজে পানি ঢেলে দেয় ইসরায়েলি সরকারের একটি নোটিশ।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ওই ইহুদি পরিবারগুলোকে ইসরায়েলি সরকারের দেওয়া নোটিশে বলা হয়, শুক্রবার (২ জুলাই) বিকাল ৪টার মধ্যে তাদের ওই জমি ছেড়ে দিতে হবে। নাহলে সেনাবাহিনী গিয়ে তাদের উচ্ছেদ করবে। ওই জমিতে বসবাসকারীদের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে সরকারের। পরবর্তীকালে সেনাবাহিনী মনে করলে তাদের কেউ কেউ আবার ফিরে যেতে পারবেন সেখানে। কিন্তু আপাতত তাদের সরে যেতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের ওই জায়গাটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সেখানে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তৈরি হবে তল্লাশি চেকপোস্টও।
তবে ওই জমির পাশেই বাস করেন ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘদিন ধরেই ওই জমি নিজেদের বলে জানান তারা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথরও ছুড়েছেন তারা। দখলদার সেনাবাহিনীর ছোঁড়া পাল্টা কাঁদানে গ্যাস গুলিতে চারজন নিহত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা।
এর আগে ফিলিস্তিনিদের তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করলেও পশ্চিমতীর থেকে ইহুদিদের কখনো উচ্ছেদ করেনি ইসরায়েল। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বদল হয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া নাফতালি বেনেট অতি কট্টরপন্থি বলে পরিচিত। আলাদা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্বই তিনি স্বীকার করেন না।
এ বিষয়ে আগে বহু বক্তৃতা করেছেন নাফতালি বেনেট। তবে যে সরকার তিনি গড়েছেন, সেখানে বামপন্থি, ইসলামপন্থি সবরকম দলই আছে। ফলে বেনেটকেও খানিকটা মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন চুক্তিটি সামনে আনা হয়। যেখানে পশ্চিমতীর থেকে ইসরায়েলিদের উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়।
চুক্তিতে অবশ্য বলা হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে সেখানে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করা হবে। পরবর্তীকালে সব ঠিক থাকলে কিছু পরিবারকে সেখানে ফের বসবাস করার সুযোগ দেওয়া হবে।
তবে স্বাভাবিক ভাবেই ফিলিস্তিন এই চুক্তিতে খুশি নয়। তাদের বক্তব্য, চুক্তি হয়েছে ইসরায়েলের মানুষের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর। ফিলিস্তিনিদের
স্বার্থরক্ষার কথা ভাবা হয়নি। ওই জমি তাদের বলে দাবি করছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের ছয়দিনব্যাপী যুদ্ধে পশ্চিমতীর দখল করে নেয় ইসরায়েল। তার আগে সেখানে ফিলিস্তিনিরা থাকতেন। ইসরায়েল তারপর থেকে পশ্চিমতীরকে নিজেদের বলে দাবি করে। ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব অবশ্য কখনোই তা স্বীকৃতি দেয়নি।
More Stories
ইরানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানালো ইসরায়েলি বাহিনী
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকেও হামলা চালানো হয়েছে। হামলার...
ইসরায়েলে হামলা নিয়ে যা বললেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অতিসম্প্রতি ইসরায়েলে যে ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী, সেই হামলা ছিল ‘সংক্ষিপ্ত’ এবং এতে শুধু সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।...
গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা স্বীকার করলো যুক্তরাষ্ট্র
গাজা উপত্যকার অন্তত কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছে বলে স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শুক্রবার এই তথ্য...
অবশেষে নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে গাজা উপত্যকায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। পাস হওয়া এই প্রস্তাবটিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির...
গাজায় যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাশিয়া-চীনের ভেটো
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তোলা প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া, চীন ও আলজেরিয়া।...
রমজানে একবারের বেশি ওমরাহ বন্ধ করল সৌদি আরব
পবিত্র রমজান মাসে কাবা শরিফ ও মসজিদুল হারামে মুসল্লির ভিড় কমাতে একাধিকবার ওমরাহ ও কাবা শরিফ তাওয়াফের অনুমতি না দেওয়ার...