Read Time:6 Minute, 37 Second

ইউরোপের অন্যান্য অনেক দেশের মতো পর্তুগালেও শনাক্ত হয়েছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত বি.১.৬১৭.২। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (ডিজিএস) কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ জুন পর্যন্ত দেশটিতে মোট ৯২ জন নাগরিকের শরীরে এ ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মিলেছে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, এখনই যদি করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হয় তাহলে দেশটি আরও একবার করোনা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে তৈরি হয়েছে বাড়তি আতঙ্ক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (ডিজিএস) ও আইএনএসএ রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্তুগালে গত ৯ জুন পর্যন্ত নতুন করে যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মাঝে শতকরা ৮৮.৪ ভাগ মানুষের মাঝে করোনার যুক্তরাজ্যের ধরন বি১১৭- এর উপস্থিত শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ১১১ জন নাগরিকের শরীরে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া বিটা ভ্যারিয়েন্ট এবং ১৪২ জন নাগরিকের শরীরে ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়া গামা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে।

দ্য পর্তুগাল নিউজ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত দুই সপ্তাহে দেশটিতে যে হারে করোনার ভারতীয় ধরন হিসেবে পরিচিত ডেল্টা নামক নতুন ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নতুন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (ডিজিএস) এবং দেশটির সরকারের মাঝে কপালে ভাঁজ তুলেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতি লাখে ১২০ জন কিংবা তার অধিক নতুন করে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে প্রতি লাখে পর্তুগালে করোনার সংক্রমণের হার ৮৩ জন। কেবলমাত্র রাজধানী লিসবনেই আক্রান্তের হার ১.১২ শতাংশ, যা সত্যিই দেশটির জন্যে উদ্বেগজনক বিষয়।

এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে পর্তুগালের সরকার টিকাদান কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। পর্তুগালে যারা এখনো ভ্যাকসিন পাননি তাদের কড়া নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি ভ্যাকসিন কার্যক্রমের গতি বাড়াতে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগস্ট মাসের মধ্যেই দেশটির মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে কমপক্ষে এক ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে সর্বমোট ২৪৫ জন আইসিউতে ভর্তি হয়েছেন। সবমিলিয়ে পর্তুগালে দূতাবাসের হিসেব অনুযায়ী, ১৫ হাজার বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রবাসীরাই রেস্তোঁরা এবং কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। করোনার আঘাতে তাদের অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকে আবার ব্যবসায় লোকসানের শিকার হয়েছেন।

বর্তমানে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ অনেকটা কমে আসায় সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। পর্তুগালের অর্থনীতি পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল এবং বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময় ট্যুরিজম ক্ষেত্র সবচেয়ে গতিশীল থাকে। তাই এবারের গ্রীষ্মকালকে ঘিরে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি তাদের জীবন ও জীবিকাকে স্বাভাবিক করার স্বপ্ন দেখছেন। তবে ক্রমাগত দেশটিতে নতুন করে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের সে স্বপ্ন যেন কিছুটা হলেও মলিন হয়ে পড়ছে।

পর্তুগালে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সেলিম বলেছেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘ দিন আমাদের ব্যবসা সরাসরি বন্ধ ছিল। সরকারের নির্দেশ মতে, শুধুমাত্র টেকওয়ে কিংবা হোম ডেলিভারি সেবা সচল রাখা হয়েছিল। মে মাসের শুরুতেই সরকার সবকিছু স্বাভাবিক করলেও, ভারতীয় নতুন ধরনটির হার যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের জন্যে উদ্বেগজনক বিষয়।’

লিসবনের ইউনিভার্সিটি অব নোভার মাস্টার্স এর ছাত্র আলী সাব্বির বলেন, ‘আমি গতে জানুয়ারি মাসে আমিরাতের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসি। দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের সঙ্গে আমিরাতের ফ্লাইট বন্ধ থাকায়, গত মে মাসের মধ্যে আমার রিটার্ন টিকিট থাকা সত্ত্বেও সময় মতো আসতে পারিনি। বাধ্য হয়ে নতুন করে জুনের ২৬ তারিখে তার্কিশ এয়ার লাইনের টিকিট কিনি। কিন্তু ভারতীয় নতুন ধরনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায়, আবারও অস্বস্থিতে পড়ার শঙ্কায় রয়েছি।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মোদির সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব বেনেট
Next post পরীমনির মতো সৌভাগ্য হয়নি আবু ত্ব-হার পরিবারের : রুমিন ফারহানা
Close