Read Time:8 Minute, 51 Second

আমেরিকার ধনকুবেররা যে কত সামান্য আয়কর দিয়েছেন সে বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছে একটি সংবাদ ওয়েবসাইট। ওই ওয়েবসাইটটি দাবি করেছে, দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবা ব্যবস্থার নথি থেকে তারা এই তথ্য পেয়েছে।

প্রোপাবলিকা সংবাদ ওয়েবসাইটটি বলছে, বিশ্বের কয়েকজন শীর্ষ ধনীর আয়কর রিটার্ন তারা দেখেছেন যাদের মধ্যে রয়েছেন জেফ বেজোস, ওয়ারেন বাফেট ও ইলন মাস্ক।

এই ওয়েবসাইটে অভিযোগ করা হয়েছে যে, অ্যামাজনের জেফ বেজোস ২০০৭ এবং ২০১১ সালে কোনো আয়কর দেননি। আর টেসলার মালিক ধনকুবের ইলন মাস্ক কোনো আয়কর দেননি ২০১৮ সালে।

হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র এই তথ্য ফাঁস করাকে ‘অবৈধ’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং এফবিআই ও কর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

প্রোপাবলিকা বলছে, কোটিপতি ধনকুবেরদের দেয়া আয়কর বিষয়ে তাদের বর্ণনায় ‘রাজস্ব বিষয়ক অভ্যন্তরীণ বিপুল তথ্য ভাণ্ডার’ তারা বিশ্লেষণ করে দেখেছে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহে আরো বিস্তারিত তথ্য তারা প্রকাশ করবে।

বিবিসি এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে এই অভিযোগ ফাঁস করা হয়েছে এমন একটা সময়ে যখন বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের কর দেবার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে এবং বিশ্বে ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রোপাবলিকা বলেছে, আমেরিকার ২৫ জন সবচেয়ে বিত্তশালী কর দেন খুবই কম। গড় হিসাবে তাদের মোট আয়ের মাত্র ১৫.৮%। আমেরিকায় মূলধারার বেশির ভাগ কর্মীর থেকে তাদের দেয়া করের পরিমাণ অনেক কম।

ওয়েবসাইটের সিনিয়র রিপোর্টার এবং সম্পাদক জেস আইসিঙ্গার বিবিসির টুডে প্রোগ্রামকে বলেছেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি দেখে যে, আপনি যদি কোটিপতি হন, তাহলে আপনার করের অঙ্ক কীভাবে শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। সত্যি বলতে, একজনের দেয়া করের অঙ্ক ‘শূন্য’ হতে পারে এটাতে আমরা হতবুদ্ধি হয়ে গেছি। যারা বেশি ধনী ব্যক্তি, তারা পদ্ধতিকে কেমনে পুরোপুরি আইনি পথে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন।’

জো বাইডেনের পরিকল্পনা
প্রোপাবলিক ওয়েবসাইট বলেছে যে, ‘পুরো আইনি কর কৌশল ব্যবহার করে বহু বিপুল বিত্তশালীরা তাদের কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়া ট্যাক্সের পরিমাণ হয় একেবারে নগণ্য পরিমাণে নামিয়ে আনছেন অথবা শূন্যের কোঠায় নিয়ে যাচ্ছেন’। অথচ গত কয়েক বছরে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে বিপুল পরিমাণে।

বহু সাধারণ জনগণের মতোই বিত্তশালীরাও দাতব্য কাজে অর্থ দান করার মাধ্যমে করে ছাড় পাচ্ছেন এবং তারা দেখাচ্ছেন তাদের উপার্জনের অর্থ বেতন থেকে আসছে না, আসছে বিনিয়োগ থেকে।

প্রোপাবলিকা ফোর্বস সাময়িকীর সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে বলেছে এই ২৫ জন শীর্ষ ধনকুবের আমেরিকানের সম্মিলিত সম্পদের মূল্য ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বেড়েছে ৪০১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু একই সময় তাদের দেয়া সম্মিলিত করের পরিমাণ মাত্র ১৩.৬ বিলিয়ন ডলার।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে বৈষম্য দূর করতে এবং তার বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগের জন্য দেশটির শীর্ষ ধনীদের কর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।

তিনি সর্বোচ্চ করের মাত্রা বাড়াতে চান, বিনিয়োগের অর্থ থেকে যাদের আয় খুব বেশি তাদের ওপর দ্বিগুণ হারে করারোপ করতে চান এবং যারা সম্পদের উত্তরাধিকারী হবেন তাদের জন্য করের নিয়ম বদলাতে চান। তবে প্রোপাবলিকা তাদের বিশ্লেষণের উপসংহার টেনে বলছেন, ‘যদিও বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তাবের অধীনে আমেরিকার কিছু ধনী, যেমন হেজ ফান্ড বা বিনিয়োগ তহবিলের ম্যানেজারদের বেশি কর দিতে হবে, কিন্তু শীর্ষ ২৫ জন ধনকুবেরের গায়ে এর কোনো আঁচ লাগবে না।’

বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় আছেন আরেক ধনী জর্জ সোরোস, যিনি অর্থ দান করেন, তিনিও ন্যূনতম ট্যাক্স দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিবিসি তার সাথে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার অফিস থেকে সে বিষয়ে কোনো উত্তর দেয়া হয়নি। তবে প্রোপাবলিকাকে দেয়া তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে জর্জ সোরোসের কয়েক বছর কোনো কর দেয়া ছিল না, কারণ তিনি বিনিয়োগ থেকে লাভ করেননি, বরং তার লোকসান হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, জর্জ সোরোস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনীদের উঁচু হারে ট্যাক্স দেবার বিষয়টি অনেক বছর ধরেই সমর্থন করে আসছেন।

আমেরিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ, যার ট্যাক্স সংক্রান্ত তথ্যাদি এই নথিতে রয়েছে।

তিনি বলেছেন, এই তথ্য প্রকাশ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে উদ্বেগ তৈরি করছে এবং এই তথ্য ফাঁসের উৎস খুঁজে বের করতে তিনি ‘আইনি পদক্ষেপ’ নেবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব ব্যবস্থায় বাজেট হ্রাসের কারণে বিত্তশালী ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে কর সংক্রান্ত বিধান প্রয়োগ করতে তাদের কোন ধরনের অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে তা নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ ওয়েবসাইট প্রোপাবলিকা বেশ কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এই সংবাদ প্রতিষ্ঠান বলছে, সেই সব নিবন্ধের জবাবেই ফাঁস হওয়া নথিগুলো তাদের হাতে এসেছে।

হোয়াইট হাউসের তথ্য সচিব জেন সাকি বলেছেন, গোপন সরকারি তথ্য অননুমোদিত ভাবে প্রকাশ করা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিলি অ্যাডামস রয়টার্স সংবাদ সংস্থার কাছে পাঠানো এক ই-মেইলে বলেছেন, বিষয়টি এফবিআই, কেন্দ্রীয় কৌঁসুলি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দু’টি অভ্যন্তরীণ নজরদারি সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের নিরপেক্ষ তদন্ত চালানোর জন্য সংস্থা রয়েছে।

আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজস্ব কমিশনার চালর্স রেটিগ বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট করদাতা সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে তদন্ত চলছে। এই নিবন্ধের তথ্যের যে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব ব্যবস্থার সূত্রে পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post কানাডায় ট্রাক চাপায় মুসলিম পরিবারের চারজনকে হত্যা
Next post কাতারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবকের মৃত্যু
Close