Read Time:7 Minute, 20 Second

আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের পর এই যুদ্ধবিরতি টেকসই করার ওপর জোর দিয়েছেন। ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে ১১দিন রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলার পর মিশরের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ২১মে রাতে। তবে ব্লিঙ্কেন এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এর মধ্যে দিয়ে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠি হামাস যাতে লাভবান না হয় সেটা তারা নিশ্চিত করবেন।

তিনি ইসরায়েলকেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে সে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে “আমেরিকা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”।
আমেরেকিান পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, আমেরিকা ফিলিস্তিনের সাথে তার সম্পর্ক আবার নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেরুজালেমে তাদের কনস্যুলেট দূতাবাস খুলছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনে সহায়তা করতে আমেরিকা অর্থ সাহায্য করবে। এগারো দিনের তীব্র লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে আড়াইশ’র বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই গাজায়। ব্লিঙ্কেন অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় যান মঙ্গলবার এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে কথা বলেন।

“আমি এখানে বলতে চাই যে, প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি এবং ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুর্নগঠনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই সম্পর্ক গঠিত হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিরা স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, সুযোগসুবিধা ও মানবিক মূল্যবোধের বিচারে সমান বলে আমেরিকার বিশ্বাসের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক আমরা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই,” যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন ব্লিঙ্কেন।

ফিলিস্তিনিরা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল এবং ট্রাম্পের মধ্য প্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে তা প্রত্যাখান করেছিল। ক্ষমতা গ্রহণের সময় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফিলিস্তিনের জন্য সহায়তা আবার পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দেন, যা তার পূর্বসুরী বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বন্ধ করে দেয়া দূতাবাসগুলোও আবার খোলার অঙ্গীকার তিনি করেন।

ব্লিঙ্কেন ঘোষণা করেছেন জেরুজালেমের কনস্যুলেট আবার চালু করার মাধ্যমে “ফিলিস্তিনের জনগণকে সাহায্যদান এবং তাদের সাথে কথাবার্তা বলার” প্রক্রিয়া আমেরিকা আবার শুরু করতে চায়। এই কনস্যুলেট ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের বিষয়াবলী দেখাশোনা করত। পরে ইসরায়েলে বিতর্কিত নতুন দূতাবাস খুলে ট্রাম্প প্রশাসন এই কনস্যুলেটের কার্যক্রম সেখানে সরিয়ে নিয়ে যান। এর ফলে ফিলিস্তিনে আমেরিকান দূতাবাসের কার্যক্রম গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

ফিলিস্তিনি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা বা পিএলও-র দপ্তর আবার খোলার বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে। এই অফিসও ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে তার তিন দিনের সফরের শুরুতে ব্লিঙ্কেন জেরুসালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথেও বৈঠক করেন।

“ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় আমেরিকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আমি তুলে ধরেছি এবং শান্তি, নিরাপত্তা এবং সবার জন্যই সম্মান ও মর্যাদার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি,” এক টুইট বার্তায় ব্লিঙ্কেন বলেন। নেতানিয়াহু ইসরায়েলের আত্মরক্ষার বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে হুঁশিয়ারি দেন যে, “হামাস যদি শান্তি ভঙ্গ ক’রে ইসরায়েলের প্রতি আক্রমণ চালায়, ইসরায়েল খুবই কঠোরভাবে তার জবাব দেবে”।

ব্লিঙ্কেন বলেন পর্দার পেছনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জোরালো কূটনৈতিক দৌত্য গত সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি অর্জনে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, “এখন এই প্রক্রিয়া আরও এগিয়ে নেবার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।” জাতিসংঘ বলেছেন সাম্প্রতিক এই লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে ২৪২জন ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে ৬৬জন শিশু এবং ৩৮জন নারী। তাদের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে নিহতদের মধ্যে ১২৯জনই বেসামরিক ফিলিস্তিনি। তারা আরও বলেছে এদের মধ্যে ২৩০জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে। সামান্য কিছু হতাহত হয়েছে হামাসের ছোঁড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাযায় পড়ার কারণে। ইসরায়েল দাবি করেছে এই লড়াইয়ে তারা ২০০এর বেশি জঙ্গিকে হত্যা করেছে। হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ তাদের যোদ্ধাদের মধ্যে হতাহতের কোন পরিসংখ্যান দেয়নি।

ইসরায়েলে মারা গেছে ১৩ জন, যার মধ্যে দুজন শিশু এবং তিনজন বিদেশি নাগরিক। হামাসের ছোঁড়া রকেটে বা রকেট হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাবার সময় এদের মৃত্যু হয়েছে বলে ইসরায়েলের মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post প্রথমবারের মতো ঋণদাতার কাতারে বাংলাদেশ
Next post সরকার দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে: মির্জা ফখরুল
Close