Read Time:5 Minute, 46 Second

‘বঙ্গভ্যাক্স’ হল mRNA প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বের প্রথম এক ডোজের কার্যকরী টিকা যা SARS-CoV-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফলভাবে মানব কোষ এবং প্রাণীদেহে সুদৃঢ় সুরক্ষা দেখিয়েছে। বিশ্বের বিখ্যাত টিকা আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড নিজস্ব প্রযুক্তিতে এই টিকাটি তৈরি করেছে এবং বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছে।

বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে কাজ করার সহজাত সীমাবদ্ধতাসমূহ যেমন: কাঁচামালের ব্যবস্থাকরণ, নতুন প্রযুক্তির সাথে অভিযোজন, গবেষণা তহবিলের অভাব সত্ত্বেও ড. কাকন নাগ এবং ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে তরুণ বিজ্ঞানীদের একটি চৌকস দল এই টিকাটি আবিষ্কার করেছে। এটির অনন্য নকশা, প্রযুক্তি ও ফর্মুলেশন প্রানিদেহে কার্যকর ফার্মাকোলোজিক্যাল প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকাটি মানব কোষ ও প্রাণীদেহে সহনশীল ও নিরাপদ। টিকাদান পরবর্তী ৭ম দিনে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে, যা ১৪তম দিনে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পাওয়া গেছে। টিকাদান পরবর্তী ৯১ দিন অবধি মেমরি কোষগুলো পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাওয়া গেছে, যা নির্দেশ করে যে এই ভ্যাকসিনটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

অন্যান্য mRNA ভ্যাকসিনের তুলনায় এই ভ্যাকসিনটি সুলভ হবে, তাই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য সহজেই ক্রয়যোগ্য হবে। এর মাধ্যমে এই দেশগুলির প্রায় ৫শ কোটি মানুষের mRNA ভ্যাকসিন (বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর টিকা প্রযুক্তি) পাওয়ার সুযোগ হবে। যেহেতু এটি এক ডোজের টিকা, তাই অন্যান্য টিকার তুলনায় এটি ক্রয়ের জন্য ব্যয় এবং প্রয়োগের জন্য সময় সাশ্রয়ী হবে।

প্রথমে টিকাটির টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স গত ২৯ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই (NCBI) ডেটাবেসে এবং গবেষণা নিবন্ধনটি ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বায়ো-আর্কাইভ (bioRxiv) এ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গতবছরের ১৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক কর্তৃক আবিষ্কৃত mRNA vaccine কে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। গত ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর গবেষণাগার পরিদর্শন করে সকল তথ্য উপাত্ত ও প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নথি পত্র পর্যালোচনা করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অগ্রগতিতে সহযোগিতা করেন। এরই পরিক্রমায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (DGDA) উক্ত গবেষণাগার ও উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন সাপেক্ষে গত ২৮ ডিসেম্বর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উৎপাদনের অনুমতি প্রদান করেন।

টিকাটি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদনের জন্য গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (BMRC) আবেদন করা হয়। ইথিক্যাল কমিটি প্রোটোকল পর্যালোচনা করে প্রায় শতাধিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়ে চিঠি (সূত্র: বিএমআরসি/ এনআরইসি/২০১৯-০২২/৯৯, তারিখ: ০৯/০২/২০২১) দেন এবং এর সকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তরসহ সংশোধিত প্রোটোকল ও প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ইং তারিখে বিএমআরসিতে জমা দেয়া হয়। এরপর বিএমআরসি থেকে আর কোন প্রকার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

টিকাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি +৪°সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাস এবং -২০°সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।এটি সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাস মুক্ত এবং শতভাগ হালাল। বর্তমানে গ্লোব বায়োটেকের উৎপাদন কেন্দ্রে প্রতিমাসে ১ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করার সক্ষমতা রয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post লস এঞ্জেলেসে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
Next post আদালতে ন্যায় বিচার পাবেন রোজিনা : কাদের
Close