২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানার এক মামলায় আগেই গ্রেপ্তার হন হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক। এবার সোনারগাঁয়ে রিসোর্টকাণ্ডে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা জান্নাত আরা ঝর্ণা হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। সোনারগাঁ থানা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
মামলা দায়েরের পর চলে যাওয়ার সময় থানা প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মামুনুল হকের কথিত এই দ্বিতীয় স্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। আমি ভালো আছি। আমার সর্বশেষ কথা আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার সাথে অনেক বড় প্রতারণা করেছে (মামুনুল হক)। আমি এর বিচার চাই।’
এদিকে, মামুনুল হক দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও মামলার এজাহারে জান্নাত নিজেকে মামুনুল হকের স্ত্রী বলেননি। তিনি বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে আমাকে নিয়ে যান।’
মামুনুলের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে ঝর্ণা বলেন, ‘২০০৫ সালে তার স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্বামীর বন্ধু হওয়ায় আমাদের বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। মামুনুলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমরা সুখে–শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্যের মধ্যে প্রবেশ করে মামুনুল হক শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। মামুনুলের কারণে আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে মামনুলের পরামর্শে বিবাহবিচ্ছেদ হয়।’
অভিযোগে ঝর্ণা বলেন, ‘বিচ্ছেদের পর তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বলেন। আমি ঢাকায় চলে আসি। মামুনুল আমাকে তার অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পারলারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন।’
জান্নাত আরা ঝর্ণা বলেন, ‘৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি। পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার দুরবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দীদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকে উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।’
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমীর খসরু বলেন, ‘রয়্যাল রিসোর্টের ঘটনার ওই নারী আজকে সোনারগাঁ থানায় উপস্থিত হয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। উনার মামলার ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯ এর ১ ধারায় তিনি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৩০। তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ইনসপেক্টর (নিরস্ত্র) সোনারগাঁ থানা।’
এর আগে, জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমানকে গত ২৪ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ২৬ এপ্রিল মেয়েকে উদ্ধারে পুলিশের সহায়তায় চেয়ে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। পরদিন মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ঝর্নাকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। ঝর্না উদ্ধার হওয়ার তিন দিনের মাথায় এই মামলা করলেন।
প্রসঙ্গত, মোদিবিরোধী আন্দোলনের নামে রাজধানী ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে বেপরোয়া তাণ্ডবের পর রিসোর্টকাণ্ডে মামুনুল হককে নিয়ে দেশজুড়ে ব্যপক তোলপাড় শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাণ্ডবের অভিযোগে একে একে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় মাওলানা মামুনুল হককে গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০২০ সালে দায়ের হওয়া মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পল্টন ও মতিঝিল থানার পৃথক দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। ওই দুই মামলাতে আবার তাকে মোট সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
More Stories
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...
বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস
ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে সেগুলোর বিচার শেষে দলটিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে বলে...
সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া
ছয় বছর পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল হাস্যাজ্জ্বল খালেদা জিয়াকে। সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে...
শেখ হাসিনাকে ফেরানোর নির্দেশনা নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে দুই দেশের বৈঠকে আলোচনার সুযোগ...
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বললেন উপদেষ্টা মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ...