Read Time:7 Minute, 47 Second

মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির ঠিক এক সপ্তাহ আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিলেন সংগঠনটির তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। বিএনপির পক্ষ থেকে ওই আন্দোলনে অর্থ সহায়তাও পাওয়া যায়। পাশাপাশি জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সরাসরি হেফাজতের কর্মসূচীতে ঢুকে জ্বালাও পোড়াও করে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল।

আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন কথা বলেছেন হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির তৎকালীন প্রচার সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও ও মারকাজুল আজিজ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত। তিনি কামরাঙ্গীরচর জামিয়া নূরীয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) মুখ্য মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন। এতে ওই সময়ের বেশ কিছু চিত্র উঠে এসেছে।

সম্পর্কিত খবর
আলেমদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানালেন শফীপুত্র আনাস মাদানী
মামুনুলের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, চাকরি হারালেন ইমাম
হেফাজত নেতাদের মুক্তি দাবি মান্নার
মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে আমি কারাঙ্গীরচর মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার ৮-১০ হাজার হেফাজত কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে লালবাগ-চকবাজার হয়ে নয়াবাজারে আসি। জোহরের নামাজ পর্যন্ত আমরা ৮-১০ হাজার লোকসহ এখানেই ছিলাম। জোহরের নামাজ আদায়ের পর দুপুর ২টার দিকে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেব ফোন দিয়ে সবাইকে নিয়ে শাপলা চত্বরে যাওয়ার জন্য বলে।’

জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, শাপলা চত্বরে যাওয়ার সময় গোলাপশাহ মাজারের (গুলিস্থান) সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তারা সেখানে ছত্রভঙ্গ হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। দুপুর ৩টার দিকে তার নেতৃত্বে ৫-৭ হাজার লোক নিয়ে তিনি শাপলা চত্বরে পৌঁছান। শাপলা চত্বরে গিয়ে তিনি মাওলানা আব্দুল্লাহ রব ইউসুফি, জুনায়েদ আল হাবিব, মামুনুল হক, মাওলানা জাফর উল্লাহ, আবুল হাসনাতমহ অনেককেই দেখতে পান। এর মধ্যে ৪৩ জনের নাম জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। মামুনুল হকসহ অন্যান্য হেফাজত নেতারা তাদের ১৩ দফা দাবি আদায় না করতে পারলে সরকার পতনের আন্দোলন করা হবে বলে তাকে জানিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেছেন, ‘মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী তাকে বলেছেন, আন্দোলন ও সহিংসতার বিষয়ে দু’জন বিএনপি নেতা এবং একজন জামায়াত নেতা তাদের অর্থ সহযোগীতা করছে। এছাড়া ২৮ এপ্রিল (২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল, ৫ মে’র এক সপ্তাহ আগে) গোপনে বাবুনগরীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার গোপন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে হেফাজতের প্রোগ্রাম শাপলা চত্বরে স্থায়ী হলে বিএনপি ও জামায়াতও যোগ দেবে বলে আলোচনা হয়েছে। ওই দিন দুপুর থেকেই বিএনপি-জাময়াতের কর্মীরা রাস্তায় বাধা সৃষ্টি ও আগুন দেওয়া শুরু করে।’

২০১৩ সালের ৫ মে’র একদিন আগে ঢাকায় এক সমাবেশ থেকে হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া। কিন্তু দলের একটি অংশ দ্বিমত পোষণ করায় সাংগঠনিকভাবে হেফাজতের অবরোধে অংশ নিতে পারেনি বিএনপি। বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা হেফাজতের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। তবে জামায়াত-শিবির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই হেফাজতের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল বলে জানিয়েছেন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে এক আলোচনা সভায় হেফাজতের একটি অংশ শাপলা চত্বরের ঘটনার পুরো দায় জুনায়েদ বাবুনগরীর বলে মন্তব্য করেন। শাপলা চত্বরের ঘটনার সময় বাবুনগরী হেফাজতের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। মৃত্যুর পর আহমদ শফীর ওপর এক আলোচনা সভায় হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সলিমুল্লাহ দাবি করেন, ‘২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনার দায় বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরীর। তিনি তখন হেফাজতের মহাসচিব ছিলের। শাপলা চত্বরে রাতে অবস্থানের কোনও সিদ্ধান্ত ছিল না। রাতে থাকলে সেনাবাহিনী নামবে বলে তিনি (বাবুনগরী) একক সিদ্ধান্তে রাতে অবস্থানের নির্দেশ দেন।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সাল থেকেই জুনায়েদ বাবুনগরী বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আহমদ শফীর জন্য আগে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর বাবুনগরীর আমীর নির্বাচিত হলে হেফাজত পুরোপুরি ‘অ্যান্টি গর্ভনমেন্ট অ্যাক্টিভিটিজ’ শুরু করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে গত বছরের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে বিরোধিতা শুরু করে চলতি বছরের মোদীবিরোধী আন্দোলনের নামে সহিংসতা শুরু করেছে।

গত ১৪ এপ্রিল লালবাগ এলাকা থেকে মুফতি ফখরুলকে গ্রেপ্তারের পর পাাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রিমান্ড শেষে সোমবার তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মুক্ত গণমাধ্যম সূচক: আরও এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ
Next post বাংলাদেশ থেকে ওমানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
Close