Read Time:8 Minute, 12 Second

জর্ডানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বিডা’র সহযোগিতা সংস্থা বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)-এর যৌথ উদ্যোগে ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইথিওপিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম। প্রফেসর মাসুদ এ খান-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিবিএফ গ্লোবালের আন্তর্জাতিক সমন্বয়ক আলিজে ইব্রাহিম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত হন রফিক খান ও সাজ্জাদ রশিদ। যুক্তরাজ্য থেকে যুক্ত হন রহিমা মিয়া, মিশর থেকে সাইদুল হক সুমন, থাইল্যান্ড থেকে নাদিয়া হক, কাতার থেকে আজাদ আশরাফ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার মুশফিক রিজভি ও ব্যারিস্টার ওমর এইচ খান জয়।

আলোচনা সভার শুরুতেই দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ও নির্যাতিতা ২ লক্ষ মা ও বোনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বলেন, ২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদারদের নির্বিচারে গণহত্যা ও ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের কাছে একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন ও ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহণ ছিল অস্থায়ী সরকারের প্রথম কার্যকরী কৌশলগত পদক্ষেপ। মুজিব নগর সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে পাকিস্তান কর্তৃক বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টাকে রুদ্ধ করে দেয়। মুজিব নগর সরকারের প্রচেষ্টার ফলেই আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়েছিল।

রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ মধ্যম আয়ের দেশের পথে হেটে চলেছে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। আর বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের এই রূপান্তরিত ভাবমূর্তিকে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণায় প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার প্রবাসীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। অতি সম্প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রবাসিরা শুধুমাত্র রেমিটেন্স পাঠিয়ে নয় বরং সেই সাথে তাদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়েও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন।

তিনি আরও বলেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিফলিত হয় প্রবাসিদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। যেকোন পেশার একজন প্রবাসী তার নিজ দেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তাই বাংলাদেশ ব্রান্ডিং-এর জন্য সুশিল সমাজ ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। তিনি ঐতিহাসিক এই দিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের এই ধরনের আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বঙ্গবন্ধুর আজকের সমৃদ্ধ সোনার বাংলার আগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানান।

সঞ্চালক প্রফেসর মাসুদ এ খান বলেন, আজকের বাংলাদেশ নিয়ে আমরা বহির্বিশ্বে গর্ববোধ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নিরলস প্রচেষ্টায় হেনরি কিসিঞ্জারের কথিত তলাবিহিন ঝুড়ি থেকে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মত মহানায়কের নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পেরেছিল এবং তার স্বপ্নেরই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই আজকের বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিবাচক প্রচারণা সব সময় প্রবাসিদের কাছে এসে পৌঁছায় না। এজন্য প্রবাসিদেরও আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। একটি দেশ তার নিজস্ব শক্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। প্রবাসিরা এর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের নিজেদেরও উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্রান্ডিং-এর লক্ষ্যে দূতাবাস ও প্রবাসীদের সমন্বিতভাবে কাজ করার উপর বক্তারা গুরুত্বারোপ করেন। বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যমেলার আয়োজন, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিস্তৃতকরণসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভূমিকার ব্যাপক প্রচারণার বিষয়ে বক্তারা আলোকপাত করেন।

ওয়েবিনারে দিবসটি নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখ্য, জর্ডানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এই ওয়েবিনারটি দূতাবাসের ‘মুজিববর্ষ ওয়েবিনার’ সিরিজের ৭ম ওয়েবিনার। তবে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ সংস্থা বিডা’র অংশীদার, বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)-এর সাথে যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রথম ওয়েবিনার। মুজিব বর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে দূতাবাসের বছরব্যাপী আরও অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রস্থ সন্দ্বীপ পৌরসভা কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল
Next post সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল মামুনুল: পুলিশ
Close