Read Time:7 Minute, 7 Second

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে গত ৬ জানুয়ারির হামলার সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ওই হামলার জন্য দেশটির গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

মার্কিন সিনেট কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ক্যাপিটলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলেন, দাঙ্গাকারীরা অস্ত্রশস্ত্র, রেডিও ও দেয়াল বেয়ে ওঠার সরঞ্জামসহ ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল।

ক্যাপিটল পুলিশের সাবেক প্রধান স্টিভেন সান্ড বলেন, তিনি বিক্ষোভ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু ‘সামরিক কায়দায় সমন্বিত আক্রমণের’ জন্য প্রস্তুতি তাঁর ছিল না।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পপন্থি বিক্ষোভকারীদের কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছিলেন।

ক্যাপিটলে হামলার পর পদত্যাগ করা চারজন কর্মকর্তার মধ্যে তিনজন গতকাল মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে সাক্ষ্য দেন। ক্যাপিটলে ওই হামলায় সেখানে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন।

ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তৃতীয় রবার্ট কন্তে আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, ক্যাপিটলে দাঙ্গাকারীদের দমনে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনে এত বেশি সময় লেগেছিল, যা তাঁকে বিস্মিত করেছিল।

ডেমোক্র্যাটরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্যাপিটলে ওই হামলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে অভিশংসনের উদ্যোগ নিয়েছিল। পরে সিনেটে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পড়ায় ট্রাম্প সম্ভাব্য শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যান।

কর্মকর্তারা কী বলেছেন?

ক্যাপিটল পুলিশের সাবেক প্রধান স্টিভেন সান্ড বলেছেন, ক্যাপিটল ভবন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দূরে রাখার জন্য পাইপ বোমা রাখা হয়েছিল।

স্টিভেন সান্ড বলেন, ‘দাঙ্গাকারী দল যখন সংরক্ষিত এলাকায় এসেছিল, তারা সাধারণ প্রতিবাদকারীদের মতো করে আসেনি। এমনটা আগে কখনোই দেখিনি আমি।’

‘ফেডারেল এজেন্সিগুলোর মধ্যে সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ গোয়েন্দা তথ্যের স্পষ্ট ঘাটতি ছিল। যার ফলশ্রুতিতে এমন হামলার ঘটনা ঘটতে পেরেছে। এখানে ক্যাপিটল পুলিশের দূর্বল পরিকল্পনার কোনো ব্যাপারই ছিল না’, যোগ করেন স্টিভেন সান্ড।

ক্যাপিটল পুলিশ ক্যাপ্টেন কারনেশা মেনডোজা সিনেট কমিটিকে বলেন, হামলাকারীদের ছোড়া রাসায়নিক দ্রব্যে তাঁর মুখের একটা অংশ পুড়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষত এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি।

‘আমার ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক ঘটনার সময় দায়িত্বরত ছিলাম, কিন্তু (ক্যাপিটলে হামলার) এই ঘটনাই ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ’, যোগ করেন কারনেশা মেনডোজা।

‘আমাদের বাহিনীর সঙ্গে আরও দশগুণ লোকবল থাকা দরকার ছিল। এবং আমি এখনও বিশ্বাস করি যা হয়েছে, তেমনই ধ্বংসাত্মক লড়াই হতো।’

ক্যাপিটলে দাঙ্গার দিন কর্মরত কর্মকর্তারা আরো বলেন, এফবিআইর একটি প্রতিবেদনে হামলাকারীরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন কথা বলা হলেও সেটি হামলার আগে ক্যাপিটলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছায়নি।

এ ছাড়া ক্যাপিটলের কর্মকর্তারা সামরিক বাহিনীর সেনা চাননি এমন প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন সাবেক সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস পল আরভিং।

আর, সাবেক সিনেট সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস মাইকেল স্টেনজার বলেন, ‘আমরা সবাই একমত যে গোয়েন্দা সহায়তা পাওয়া যায়নি।’

অন্যদিকে, শুনানির নেতৃত্বে থাকা সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার জানিয়েছেন যে, ক্যাপিটলে দাঙ্গার দিন ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে পেন্টাগন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য দিতে ডাকা হবে।

দাঙ্গায় সেদিন যা ঘটেছিল

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েক হাজার সমর্থক গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। সেদিন নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয়কে অনুমোদন করার জন্য জড়ো হয়েছিলেন।

ক্যাপিটলে সহিংসতার যেসব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে—সেগুলোতে দেখা যায়, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উন্মত্ত সমর্থকেরা ক্যাপিটলের ভেতরে ঢুকে সেখানে ঘুরে ঘুরে কতটা তাণ্ডব চালাতে সক্ষম হয়েছিল। দেখা গেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকেরা ভবনের ভেতরে ভাঙচুর চালাচ্ছে, ছবি তুলছে, এমনকি অনেকে তাদের এই তাণ্ডবলীলা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরাসরি সম্প্রচার করেছে।

এ ছাড়া অনেকে ভবনের ভেতর থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post লিবিয়া উপকূলে জাহাজডুবিতে ৪১ অভিবাসীর মৃত্যু
Next post কানাডা প্রবাসী আনোয়ারুল হক এ্যন্ডি মারা গেছেন
Close